পূর্বপদে অব্যয় এবং পরপদে বিশেষ্য মিলে যে সমাস হয়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। পূর্বপদে অব্যয় থাকে বলে অনেকে একে প্রাদি সমাসের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। কারণ উপসর্গও এক ধরনের অব্যয়। কতকগুলো উপসর্গ ও অব্যয় এবং তাদের অর্থবিস্তারের জন্য অব্যয়ীভাব সমাস বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়।
সদৃশ অর্থে : অনু উপসর্গ যোগে সমাজ সম্পন্ন হয়।
কালোর অনুরূপ- কালোমত – অনু (সদৃশ) যে করণ- অনুকরণ
চাদের অনুরূপ- চাঁদপানা – মূর্তির সদৃশ- প্রতিমূর্তি
অনু সদৃশ- অনুরূপ – দ্বীপ সদৃশ- উপদ্বীপ
অবধি বা পর্যন্ত অর্থে : আ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়।
কণ্ঠ পর্যন্ত- আকণ্ঠ – জানু পর্যন্ত- আজানু
কর্ণ পর্যন্ত- আকর্ণ – জীবন পর্যন্ত- আজীবন
সমুদ্র পর্যন্ত- আসমুদ্র – মরণ পর্যন্ত- আমরণ
অনুরূপ : আবাল্য, আজন্ম, আগাগোড়া, আগাপাছতলা ইত্যাদি।
সমীপে বা নিকটে অর্থে : (উপ অব্যয় যোগে)
নগরী সমীপে- উপনগরী – উপ যে গ্রহ- উপগ্রহ (ক্ষুদ্র অর্থে)
কণ্ঠের সমীপে- উপকণ্ঠ – উপ যে জাতি- উপজাতি (ক্ষুদ্র অর্থে)
কূলের সমীপে- উপকূল – উপ যে নদী- উপনদী (ক্ষুদ্র অর্থে)
পুনঃ পুনঃ বা বীপ্সা অর্থে : (প্রতি অব্যয় যোগে)
দিন দিন- প্রতিদিন – রোজ রোজ- হররোজ (প্রতির স্থলে হর)
গৃহে গৃহে- প্রতিগৃহ – দিন দিন- প্রতিদিন
বছর বছর- ফি বছর (প্রতির পরিবর্তে ফি) – ক্ষণে ক্ষণে- প্রতিক্ষণ
বার বার- প্রতিবার
অভাব অর্থে : (সাধারণত নিঃ অব্যয় যোগে) এখানে অভাব অর্থে, অ, হা বা বে ব্যবহৃত হয়।
ভাতের অভাব- হাভাত – আমিষের অভাব- নিরামিশ
মিলের অভাব- অমিল – নুনের অভাব- আলুনি
হায়ার অভাব- বেহায়া
যোগ্যতা অর্থে :
রূপের যোগ্য- অপরূপ – যোগ্যতা আছে- উপযুক্ত
জ্ঞানের যোগ্য- অভিজ্ঞ
পন্ডাৎ অর্থে :
তাপের পন্ডাৎ- অনুতাপ – রাগের পন্ডাৎ- অনুরাগ
গমনের পন্ডাৎ- অনুগমন
অনতিক্রম্য অর্থে :
ইচ্ছেকে না ছেড়ে- যাচ্ছে – শক্তিকে অতিক্রম না করে- যথাশক্তি
সাধ্যকে অতিক্রম না করে- যথাসাধ্য
প্রতিনিধিত্ব অর্থে :
মূর্তির প্রতিনিধি- প্রতিমূর্তি – বিম্বের প্রতিনিধি- প্রতিবিম্ব
ছায়ার প্রতিনিধি- প্রতিচ্ছায়া – ধ্বনির প্রতিনিধি- প্রতিধ্বনি
কূলের বিপরীত- প্রতিকূল
তথ্যসূত্র: পুরাতন বইয়ের দোকান/লাইব্রেরি হতে বিভিন্ন লেখকের বাংলা ব্যাকরণ বই সংগ্রহ করে তা এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।