প্র : আবু ইসহাক কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : ১৯২৬ সালের ১লা নবেম্বর; শরিয়তপুর জেলার নড়িয়ায়।
প্র : তিনি মূলত কী হিসেবে পরিচিত?
উ : ঔপন্যাসিক হিসেবে।
প্র : পেশায় তিনি কী ছিরেন ?
উ : সরকারি চাকুরে। এন.এস.আই. খুলনা বিভাগের ডেপুটি ডাইরেকটর হিসেবে ১৯৮৪ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন।
প্র : তাঁর প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থের নাম ও ধরন কী?
উ : সূর্য-দীঘল বাড়ী (১৯৫৫); উপন্যাস।
প্র : ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : ১৯৫৫ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত। বাংলাদেশের গ্রামজীবনের বিশ্বস্ত দলিল এই গ্রন্থ। বিশেষত গ্রামীণ মুসলমান জীবনের বিশ্বস্ত এবং আন্তরিক পরিচয় সমকালীন বাংলা সাহিত্যে বিরল। প্রকাশের অব্যবহিত পর থেকে বাস্তব চিত্রণ, চরিত্রায়নের স্বাভাবিকতা ও প্রকাশভঙ্গির ঋজুতার জন্য উপন্যাসটি সমালোচক ও পাঠকসমাজে বন্দিত হয়েছে। জয়গুনদের বাড়িটিতে রাতে কথিত ভূতের ঢিল পড়ে, সে বাড়িতে নির্ভয়ে থাকা যায় না। তাই সূর্য-দীঘল বাড়ি অমঙ্গলের প্রতীকে পরিণত হয়। উপন্যাসে গ্রামের মানুষের দারিদ্র্য, কুসংস্কার, মোড়ল ও মোল্লাদের দৌরাত্ম্য, হৃদয়হীনা শাশুড়ির বৌয়ের প্রতি অত্যাচার ইত্যাদি এমন বিশ্বস্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যে কারণে এটি হয়ে উঠেছে গ্রামীণ জীবনের যথার্থ উপস্থাপনা। উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্র : জয়গুন, তার ছেলে হাসু, মেয়ে মায়মুন, শফি, ডা. রমেশ চক্রবর্তী, মোড়ল গদু প্রধান।
প্র : তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের নাম ও ধরণ উল্লেখ কর।
উ : উপন্যাস : পদ্মার পলিদ্বীপ (১৯৮৬), জাল (১৯৮৮); গল্পগ্রন্থ : হারেম (১৯৬২), মহাপতঙ্গ (১৯৬৩)।
প্র : ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : আবু ইসহাকের দীর্ঘ সময়ব্যাপী রচিত উপন্যাস ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার মুক্তধারা থেকে উপন্যাসটি প্রকাশ পেলেও ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে আবু ইসহাক উপন্যাসটি রচনায় হাত দেন। উপন্যাসের প্রথম ষোলটি অধ্যায় বাংরা একাডেমী প্রকাশিত ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে মে ১৯৭৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। অবশ্য তখন এর নাম ছিল ‘মুখর মাটি’। এর অনেক পরে আবু ইসহাক উপন্যাসটি বত্রিশটি অধ্যায়ে সমাপ্ত করেন এবং এর নামবদল করে দেন ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’। দ্বিতীয় নামটি সাদামাটা; উপন্যাসটি না পড়েও এতে কী আছে তা বোঝা যায়। প্রথম নামটি ছিল বহুগুণে সাহিত্যগুণসম্পন্ন, প্রতীকী। ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ একটি আঞ্চলিক উপন্যাস। পদ্মানদীকে বলা হয় ‘কীর্তিনাশা’। কারণ চাঁদরায়-কেদাররায়-রাজবল্লভ প্রমুখ বারভূঁইয়াদের কীর্তি এ নদী ধ্বংস করেছে। এর উপন্যাসে পদ্মাতীরবর্তী চরকেন্দ্রিক অধিবাসী, তাদের চরদখল, জীবন-সংগ্রাম মুখ্য। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিক্রিয়া (যেমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি) যে গ্রামীণ বা চরাঞ্চলের মানুষের উপরও পড়েছিল তা এ উপন্যাসে প্রতিভাত। ফজল এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। এছাড়া এরফান মাতব্বর, আরশেদ মোল্লা, জঙ্গুরুল্লা, জরিনা, রূপজান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসটি গতানুগতিক। পঁচিশ বছর আগের লেখা ও বিষয়-নির্বাচন আড়াই দশক পড়ে অনিবার্যভাবেই পুরোনো হয়ে যায়। আবু ইসহাকের এ উপন্যাসেও মধ্য আশির দশকে নতুন কোনো চমক ছিল না, যেমন চমক ছিল তাঁর ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’তে।
প্র : বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত, তাঁর সম্পাদিত অভিধানটির নাম কী?
উ : সমকালীন বাংরা ভাষার অভিধান (১৯৯৩)
প্র : তাঁর প্রাপ্ত প্রধান প্রধান পুরস্কার কী?
উ : বাংলা একাডেমী পুরস্কা (১৯৬৩), একুশে পদক (১৯৯৭)।