আধুনিক যুগ

কাজী নজরুল ইসলাম

প্র : কাজী নজরুল ইসলাম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : চুরুলিয়া গ্রাম, আসানসোল, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ।
প্র : তিনি কবে জন্ম নেন?
উ : ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ (২৪শে মে, ১৮৯৯ খ্রি.)।
প্র : তাঁর পিতার নাম কী?
উ : কাজী ফকির আহমদ।
প্র : তাঁর মাতার নাম কী?
উ : জাহেদা খাতুন।
প্র : নজরুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বর্ণনা দাও।
উ : দশ বছর বয়সে গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ (১৯০৯) হন। এরপর ১৯১৪ সালে ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে, ১৯১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের রানীগঞ্জ শিয়ারশোল রাজস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯১৭ সালে দশম শ্রেণি প্রি-টেস্ট পরীক্ষার সময় লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
প্র : বার বছর বয়সে তিনি কোথায় যোগ দেন?
উ : লেটোর দলে এবং দলে ‘পালা গান’ রচনা করেন।
প্র : তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হয় কীভাবে?
উ : আসানসোল রুটির দোকানে কাজ করা অবস্থায় আসানসোল থানার দারোগা কাজী রফিজউদ্দিন তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে নিজের বাড়ি ময়মনসিংহের কাজি সিমলা গ্রামে নিয়ে যান এবং দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৯১৪-র ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে কাজি সিমলা ত্যাগ করেন। পরে নিজের ইচ্ছায় শিয়ারশোল রাজস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই প্রি-টেস্ট পরীক্ষার সময় ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে যোগ দেন (১৯১৭)।
প্র : নজরুল বাংলাদেশের কোন সঙ্গীতের রচয়িতা?
উ : রণসঙ্গীত।
প্র : রণসংগীত হিসেবে মূল কবিতাটির কত চরণ গৃহীত?
উ : ২১ চরণ।
প্র : রণসংগীতটি কী শিরোনামে সর্বপ্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উ : ‘নতুনের গান’ শিরোনামে ঢাকার ‘শিখা’ পত্রিকায় ১৯২৮ (১৩৩৫) বার্ষিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। পরে এর নাম হয় ‘চল্ চল্ চল্’।
প্র : নজরুলের কোন গ্রন্থে এই সংগীত অন্তর্ভুক্ত আছে?
উ : ‘সন্ধ্যা’ কাব্যগ্রন্থে।
প্র : ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়?
উ : ‘সাপ্তাহিক বিজলী’র ২২শে পৌষ (১৩২৮) সংখ্যায়।
প্র : নজরুল কোন দৈনিক পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন?
উ : ‘সান্ধ্য দৈনিক নবযুগ’ (১৯২০) এর।
প্র : এই পত্রিকার সঙ্গে আর কোন দুজন রাজনৈতিক নেতা যুক্ত ছিলেন?
উ : কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ও শেরে বাংলা ফজলুল হক।
প্র : তাঁর সম্পাদনায় কোন অর্ধসাপ্তাহিক পত্রিকা বের হত?
উ : ‘ধূমকেতু’ (১৯২২)।
প্র : ধূমকেতু পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের কোন বাণী ছাপা হয়?
উ : ‘আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু-’।
প্র : কোন কবিতা প্রকাশিত হলে তিনি গ্রেফতার হন?
উ : ধূমকেতুর পূজা সংখ্যায় (২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯২২) ‘আনন্দময়ীর আগমনে’।
প্র : রবীন্দ্রনাথ তাঁর কোন গীতিনাট্য নজরুলকে উৎসর্গ করেন?
উ : ‘বসন্ত’।
প্র : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তরুণ কবি নজরুলকে ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য উৎসর্গ করলে অনেকেই তা মেনে নিতে পারেন নি। এর প্রত্যুত্তরে রবীন্দ্রনাথ কোন কথা জানিয়েছিলেন?
উ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ-প্রসঙ্গে লিখেছেন: “নজরুল ইসলাম সম্পর্কে তোমাদের মনে যেন কিছু সন্দেহ রয়েছে। নজরুলকে আমি ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য উৎসর্গ করেছি এবং উৎসর্গপত্রে তাকে ‘কবি’ বলে অভিহিত করেছি। জানি তোমদের মধ্যে কেউ কেউ এটা অনুমোদন করতে পারো নি। আমার বিশ্বাস, তোমরা নজরুলের কবিতা না পড়েই এই মনোভাব পেপাষণ করেছো। আর পড়ে থাকলেও রূপ ও রসের সন্ধান করো নি, অবজ্ঞাভরে চোখ বুলিয়েছো মাত্র। কাব্যে অসির ঝনঝনা থাকতে পারে না এসব তোমাদের আবদার বটে। সমগ্র জাতির অন্তর যখন সে সুরে বাধা, অসির ঝনঝনায় যখন সেখানে ঝংকার তোলে, ঐকতান সৃষ্টি হয়, তখন কাব্যে তাকে প্রকাশ করবে বৈকি! আমি যদি আজ তরুণ হতাম, তাহলে আমার কলমেও ঐ সুর বাজতো।”
প্র : হুগলি জেলে কর্মকর্তাদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে নজরুল অনশন করলে রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে কী লিখে টেলিগ্রাফ পাঠান?
উ : ‘Give up hunger strike. Our literature claims you’.
প্র : নজরুল জেল থেকে মুক্তি পান কবে?
উ : ১৯২৩-এর ১৫ই অক্টোবর।
প্র : নজরুলের স্ত্রীর নাম কী?
উ : আশালতা সেনগুপ্ত, ডাক নাম দুলি। আদর করে ডাকা হতো দোলন বা দুলু। বিয়ের পর নজরুল তাঁর নাম পাল্টে দেন ‘প্রমীলা’। (রবীন্দ্রনাথও তাঁর স্ত্রী ভবতারিণী দেবীর নাম পাল্টে দিয়ে করেছিলেন মৃণালিনী।)
প্র : আশালতা সেনগুপ্তের (প্রমীলা) সঙ্গে নজরুলের বিয়ে হয় কত তারিখ?
উ : ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে এপ্রিল।
প্র : নার্গিসের সঙ্গে কবির কি বিয়ে হয়েছিল?
উ : এ নিয়ে মতান্তর আছে। তবে তাঁদের আক্দ হয়েছিল বলে জানা যায়। নজরুল নার্গিসকে ভালোওবাসতেন। তাই ইরানি ফুল নার্গিসের নামে প্রিয়ার নামকরণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম : সৈয়দা খাতুন।
প্র : কাজী নজরুল ইসলাম কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দেন কখন?
উ : ১৯২৫-এ ফরিদপুর কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলনে।
প্র : তাঁর সম্পাদিত ‘লাঙ্গল’ পত্রিকার প্রকাশকাল কত?
উ : ১৯২৫ সাল।
প্র : নজরুলকে জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয় কোথায় এবং কখন?
উ : ১৯২৯-এর ১৫ই ডিসেম্বর কলকাতার অ্যালবার্ট হলে।
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থের নাম কী?
উ : ব্যথার দান (প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ১৯২২)
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত রচনার নাম কী?
উ : বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী (প্রকাশ : জ্যৈষ্ট ১৩২৬; সওগাত)।
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম কী?
উ : মুক্তি (প্রকাশ :শ্রাবণ ১৩২৬; বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা)।
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গল্পের নাম কী?
উ : বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী (প্রকাশ : জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬)।
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের নাম কী?
উ : ব্যথার দান (প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ১৯২২)
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উ : অগ্নি-বীনা (সেপ্টেম্বর, ১৯২২)
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাসের নাম কী?
উ : বাঁধন-হারা (১৯২৭)।
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধের নাম কী?
উ : তুর্কমহিলার ঘোমটা খোলা (প্রকাশ : কার্তিক ১৩২৬)
প্র : নজরুলের প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ কোনটি ?
উ : যুগবাণী (অক্টোবর ১৯২২)
প্র : নজরুলের প্রথম প্রকাশিত নাটকের নাম কী?
উ : জিলিমিলি (১৩৩৪, নওরোজ)।
প্র : প্রথম প্রকাশিত নাট্যগ্রন্থ কোনটি?
উ : ঝিলিমিলি (১৩৩৭)। এই গ্রন্থে মোট তিনটি নাটক আছে।
প্র : নজরুলের প্রথম নিষিদ্ধকৃত গ্রন্থ কোনটি?
উ : বিষের বাঁশি (প্রকাশ : অগস্ট ১৯২৪/ নিষিদ্ধ : ২৪শে অক্টোবর ১৯২৪)
প্র : নজরুলের মোট কয়টি গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয়, কী কী?
উ : ৫টি। বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয় শিখা, চন্দ্রবিন্দু, যুগবাণী।
প্র : জেলে বসে লেখা জবানবন্দির নাম কী?
উ : ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। রচনার তারিখ : ৭/১/১৯২৩।
প্র : অগ্নি-বীণা কাকে উৎসর্গ করা হয়?
উ : বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে।
প্র : অগ্নি-বীণার প্রথম কবিতা কোনটি ?
উ : প্রলয়োল্লাস।
প্র : ‘অগ্নি-বীণা’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকাশিত গ্রন্থ। ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তাম্বরধারিণী মা’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’, ‘কামালপাশা’, ‘আনোয়ার’, ‘রণভেরী’, ‘সাত-ইল-আরব’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘কোরবানী’, ‘মোহররম’ এই বারটি কবিতার সমাহারে কলকাতার আর্য পাবলিশিং হাউস থেকে ১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত। কিন্তু প্রকাশক হিসেবে নজরুলের নিজের নাম ছাপা হয়েছে। এই কাব্যের অন্যতম ও জনপ্রিয় কবিতা ‘বিদ্রোহী’। ‘বিদ্রোহী’। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্য প্রথমে তাঁকে ‘বিদ্রোহীর কবি’ বলা হয়, পরে ‘বিদ্রোহী কবি’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর অবক্ষয় এবং ভারতের স্বাধিকার আন্দোলনের পটভূমিতে কাব্যটি রচনা করেন কাজী নজরুল ইসলাম। কাব্যটিতে কবি ভারতীয় পুরাণ এবং পশ্চিম এশীয় ঐতিহ্য ব্যবহার করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। কবি শব্দ ব্যবহারেও রেখেছেন স্বকীয়তার ছাপ। কাব্যটিয় প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ পরিকল্পনায় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয় ব্রিটিশ বিরোধী বাঙালি বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে। উল্লেখ্য যে, অনেকে লিখে থাকেন ‘অগ্নি-বীণা’ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এ তথ্য সত্য নয়। গ্রন্থটি কোনোদিন নিষিদ্ধ হয় নি।
প্র : নজরুলের কোনটি প্রত্রোপন্যাসের পর্যায়ভুক্ত?
উ : বাঁধন-হারা।
প্র : নজরুল মস্তিস্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত হন কখন?
উ : ১৯৪২-এর ১০ই অক্টোবর।
প্র : বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে নজরুলকে কলকাতা থেকে ঢাকায় আনয়ন করা হয় কত সালে?
উ : ১৯৭২-এর ২৪শে মে। এরপর থেকে নজরুল বাংলাদেশেই ছিলেন।
প্র : নজরুলকে কবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়?
উ : তাঁর মৃত্যুর মাত্র ছয়মাস আগে, ১৯৭৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি।
প্র : কবির বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলো কি কি?
উ : ‘অগ্নি-বীণা’ (১৯২২), ‘বিষের বঁশি’ (১৯২৪), ‘ভাঙার গান’ (১৯২৪), ‘সাম্যবাদী’ (১৯২৫), ‘সর্বহারা’ (১৯২৬), ফণি-মনসা (১৯২৭), ‘জিঞ্জির’ (১৯২৮), ‘সন্ধ্যা’ (১৯২৯), ‘প্রলয় শিখা’ (১৯৩০) ইত্যাদি।
প্র : ‘দোলন-চাঁপা’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ১৩৩০ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে (অক্টোবর, ১৯২৩) ‘দোলন-চাঁপা’ প্রকাশিত হয়। কবি তখন রাজবন্দি হেিসবে জেল্ ে২১টি কবিতার সংকলন। প্রথম কবিতা ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’। এছাড়া বেলাশেষে, পুবের চাতক, অবেলার ডাক, পূজারিণী, কবি-রানী ইত্যাদি কবিতা রয়েছে। মূলত প্রেম-প্রধান কবিতার বই। নজরুল কুমিল্লা গিয়ে ইন্দ্রকুমার সেনগপ্তের বাড়িতে ছিলেন। এ সময় ইন্দ্রকুমারের ভ্রাতুষ্পুত্রী আশালতার সঙ্গে তাঁর প্রণয় জন্মে। আশালতার ডাকনাম ছিল দুলি। দুলিকে আদর করে দোলন ও দুলু বলে ডাকা হতো (দ্রষ্টব্য : মুজফ্ফর আহমদের স্মৃতিকথা)। দোলন বা আশালতার নামেই ‘দোলন-চাঁপা’ গ্রন্থের নামকরণ। এর অধিকাংশ কবিতা দোলন বা দুলি বা আশালতাকে নিয়ে। কারাদন্ড ভোগ শেষে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৪শে এপ্রিল নজরুল ও আশালতার বিয়ে হয়। বিয়ের পর নজরুল স্ত্রীর নামকরণ করেন প্রমীলা (রবীন্দ্রনাথ ও স্ত্রী ভবতারিণীর নাম পাল্টে দিয়ে করেছিরেন মৃণালিণী।)।
প্র : ‘বিষের বাঁশী’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে (অগস্ট ১৯২৪) ‘বিষের বাঁশী’ প্রকাশ করেন কবি নিজেই। সে বছরই সরকার গ্রন্থটি নিষিদ্ধ করে। এটি নজরুলের প্রথম নিষিদ্ধকৃত গ্রন্থ। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয়েছিল ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে এপ্রিল। এ গ্রন্থের কবিতাগুলো বিদ্রোহাত্মক ও জাতি জাগরণমূলক। বন্দী-বন্ধনা, শিকল-পরা গান, চরকার গান, জাতের নামে বজ্জাতি, সত্য-মন্ত্র ইত্যাদি গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য কবিতা। নজরুল ইসলামের কবিতার বলিষ্ঠতা, যৌবনের উদ্দাম শক্তি, উদাহর মানবিকতা ও সামাজিক সচেতনতা এবং গীতি প্রতিভার সমস্ত বৈশিষ্ট্য এই কাব্যে পরিস্ফুট।
প্র : ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে (অগস্ট ১৯২৪) কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সরকার একই বছর ১১ই নভেম্বর বইটি নিষিদ্দ করে। ব্রিটিশ আমলে এ গ্রন্থের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয় নি। ১১টি কবিতা এখানে আছে। প্রতিটি কবিতাই বিদ্রোহাত্মক। জাগরণী, দুঃশাসনের রক্ত-পান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কবিতা।
প্র : ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে নজরুলের অসাধারণ ও মানবতাবাদী কাব্যগ্রন্থ ‘সাম্যবাদী’ প্রকাশিত হয়। সাম্যবাদী ঈশ্বর, মানুষ, পাপ, চোর-ডাকাত, বারাঙ্গনা, কুলি-মজুর ইত্যাদি এর উল্লেখযোগ্য কবিতা। এ গ্রন্থে কতিপয় বিপ্লবাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন নজরুল। তিনি বলেছেন, পৃথিবীতে মানুষই সব গ্রন্থ এনেছে, কোন গ্রন্থই মানুষ আনে নি : ‘মানুষেরে ঘৃণা করি/ ও কারা কোরান বেদ বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি / ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে / যাহারা আনিল গ্রন্থ – কেতাব সেই মানুষেরে মেরে / পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল-মূর্খরা সব শোনো / মানুষ এনেছে গ্রন্থ;-গ্রন্থ আনে নি মানুষ কোনো।’
প্র : ‘সঞ্চিতা’র পরিচয় দাও।
উ : ‘সঞ্চিতা’ নজরুলের অনুমোদনে প্রকাশিত তাঁর কবিতার নির্বাচিত সংগ্রহ। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ পায়। উৎসর্গ করেন এই লিখে : ‘বিশ্বকবিসম্রাট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু’। ৭৮টি কবিতা ও গান এখানে সংকলিত। নজরুলের কবিতার ধারা বুঝবার জন্য এ সংকলনটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, জীবিতাবস্থায় নজরুল এগুলোকেই তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যসৃষ্টি বলেন অনুমোদন করে গেছেন।
প্র : ‘রুবাহইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়ামে’র পরিচয় দাও।
উ : ইরানের জীবনবাদী কবি ওমর খৈয়ামের রুবাই বা কবিতা অনুবাদ করেন নজরুল। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে ‘রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। সৈয়দ মুজতবা আলী এর ভূমিকা লেখেন। জীবনবাদী ওমর নজরুলকে খুব আকর্ষিত করেছিলেন। এ অনুবাদের অত্যন্ত চমৎকার ভাষাভঙ্গি ব্যবহৃত। অন্যান্য অনুবাদকারের চেয়ে নজরুলের অনুবাদ অনুভূতির পরশে, যথাযথ শব্দের পারিপাট্যে উজ্জ্বল।
প্র : জীবনীকাব্যগুরো কী কী?
উ : ‘চিত্তনামা’ (১৯২৫) ও ‘মরু-ভাস্কর’ (১৯৫০)।
প্র : চিত্তনামা ও মরু-ভাস্কর কার জীবনভিত্তিক কাব্য?
উ : চিত্তনামা : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ; মরু-ভাস্কর : হযরত মুহম্মদ।
প্র : ‘চিত্তনামা’ গ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ‘চিত্তনামা’ কাব্যগ্রন্থ। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত (১৩৩২ বঙ্গাব্দ)। ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২রা আষাঢ় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ দার্জিলিঙে মৃত্যুবরণ করেন। এ মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে নজরুল অর্ঘ্য, অকাল-সন্ধ্যা, সান্ত¡না, ইন্দ্রপতন, রাজভিখারি নামে কয়েকটি কবিতা সমকালীন পত্রিকায় লেখেন। এ কবিতাগুলোতে চিত্তরঞ্চনের প্রতি কবির আবেগ মিশ্রিত শ্রদ্ধা প্রকাশিত হয় এবং তিনি চিত্তরঞ্চনকে নবির সঙ্গে তুলনা করে লেখেন : ‘জন্মিলে তুমি মোহাম্মদের আগে হে পুরুষবর / কোরানে ঘোষিত তোমার মহিমা হতে পয়গাম্বর।’ (ইন্দ্রপতন) নজরুল চিত্তরঞ্জনকে ‘হে মানব-আম্বিয়া’ নামেও অভিহিত করেন। এতে গোঁড়া মুসলিমরা ক্ষেপে যায়। কবি যকন এসব কবিতা নিয়ে ‘চিত্তনামা’ গ্রন্থ বের করেন, তখন তাই ওই অংশগুলো বর্জিত হয়। চিত্তরঞ্চন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী ছিলেন খুবই øেহশীলা নারী। নজরুলের মধ্যে মাতৃøেহ পাবার আগ্রহ ছিল। কারণ নিজের মায়ের সঙ্গে নজরুলের সম্পর্ক ভালো ছিল না। নজরুল বাসন্তী দেবীকে মা বলে ডাকতেন।
প্র : ‘মরু-ভাস্কর’ গ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : হযরত মোহাম্মদের জীবনী-কাব্য। ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ থেকে কাব্যটি রচিত হয়। ১৩৫৭ বঙ্গাব্দে (১৯৫০) গ্রন্থাকারের ছাপা হয়। একাব্যের চারটি সর্গ। ১৮টি খন্ড কবিতা এখানে স্থান পেয়েছে। মোহাম্মদের জন্ম, শৈশব, কৈশোর, বিয়ে ইত্যাদি এখানে কবিতায় বর্ণিত।
প্র : কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাসগুলোর নাম উল্লেখ কর।
উ : বাঁধন-হারা’ (১৯২৭), ‘মৃত্যুক্ষুধা’ (১৯৩০) ও কুহেলিকা (১৯৩১)।
প্র : বাঁধন-হারা’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : নজরুল ইসলাম রচিত প্রথম উপন্যাস। ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে (১৯২৭) গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলেও ১৩২৭ বঙ্গাব্দে (১৯২১) ‘মোস লেম ভারতে’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত এই উপন্যাসের বেশ কিছু অংশ গ্রন্থাকারের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। বর্তমান গ্রন্থের রচয়িতা তা কুঁজে পেয়ে ১৯শে মে, ২০০৬ দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় তা পুনঃপ্রকাশ করেন। বাঁধন-হারা’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস। নুরুর সঙ্গে মাহবুবার প্রণয় এবং পরে বিয়ের উদ্যোগ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও হঠাৎ নুরু পালিয়ে গিয়ে সৈনিক জীবন গ্রহণ করে। সৈনিক জীবন গ্রহণের পেছনে দেশ ও জাতির ক্রান্তি কালীন কোন তাগিদ ছিল না। এ প্রসঙ্গে নার্গিসের সঙ্গে কবির প্রণয় ও আক্দ (মতান্তর আছে) প্রসঙ্গ মনে আসে। অনেকে মনে করেন নুরুই নজরুল। এ উপন্যাসে রাবেয়া, মাহবুবা, সাহসিকা প্রমুখ নারী চরিত্রের উল্লেখ ও তাদের প্রত্র বিনিময় আছে। সাহসিকা যথেষ্ট প্রতিবাদী; চিরকুমারী থেকে যে নারীদের উপর পতিত নানা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে।
প্র : ‘মৃত্যু-ক্ষুধা’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : ‘মৃত্যু-ক্ষুধা’ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ (১৯৩১) মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। ‘সওগাত’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয় ১৩৩৪ অগ্রহায়ণ থেকে ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন পর্যন্ত। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সপরিবার মেজ-বৌয়ের মুসলিম তেকে খ্রিষ্ট ধমৃান্তর গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অন্যদিকে রুবি আনসারকে ভালোবাসলেও রুবির পিতা তাকে বিয়ে দেয় আইসিএস পরক্ষিার্থী মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। মোয়াজ্জেমের মৃত্যুর পর বিধবা রুবির জীবনে নেমে আসে সমাজের বিধিনিষেধ। নারীজীবনের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা এবং সমাজের বাস্তবচিত্র এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে।
প্র : ‘কুহেলিকা’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে ‘নওরোজ’ পত্রিকায় ‘কুহেলিকা’ উপন্যাস প্রকাশ আরম্ভ হয়্ গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশ পায় ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে (১৯৩১)। এ উপন্যাসে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এসেছে অত্যন্ত বড় ক্যানভাসে। উপন্যাসের নায়ক জাহাঙ্গীর বিপ্লবী স্বদেশি দলের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তার যে প্রেমের সম্পর্ক ও নারী সম্পর্কে ধারণা তা যথেষ্ট ঋণাত্মক। জাহাঙ্গরি বলে : ‘নারী কুহেলিকা’। তাহমিনা (ভূণী), চম্পা, ফিরদৌস বেগম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্র। নারী সম্পর্কে এ উপন্যাসে বলা হয়েছে : ‘ইহারা মায়াবিনীর জাত। ইহারা সকল কল্যাণের পথে মায়াজাল পাতিয়া রাখিয়াছে। ইহারা গহন-পথের কণ্টক, রাজপথের সদ্যু।’
প্র : ‘যুগবাণী’ গ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : প্রবন্ধের গ্রন্থ ‘যুগবাণী’ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে প্রকাশিত হয়। এটি নজরুলের প্রথম প্রবন্ধের বই। প্রকাশের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে (২৩শে নভেম্বর, ১৯২২) সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে নিষেধাজ্ঞা ওঠে যায়। নবযুগ, ধর্মঘট, সত্য-শিক্ষা, ভাব ও কাজ, জাতীয় শিক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয, জাগরণী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ। প্রবন্ধগুলোতে স্বদেশি চিন্তাচেতনা ও ব্রিটিশ বিরোধিতা প্রকাশিত।
প্র : ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’র পরিচয় দাও।
উ : নজরুল সম্পাদিত অর্ধ-সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’ ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ কর্ েসেই পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ও নিষিদ্ধ হয়্ নজরুলকে আটক করে জেলে রাখার পর তাঁর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি লিখিতভাবে আদালতে উপস্থাপন করেন মাত্র চার পৃষ্ঠার বক্তব্য। তাই ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই জানুয়ারি কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে তিনি এটা রচনা করেন। পরে ধূমকেতু, প্রবর্তক, উপাসনা ইত্যাদি পত্রিকায় ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দেই তা প্রকাশিত হয়। এটা কোন বই নয়।
প্র : ‘ঝিলিমিলি’ গ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : তিনটি ছোট নাটকের গ্রন্থ ‘ঝিলিমিলি’। ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের (১৯৩০) অগ্রহায়ণে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। ঝিলিমিলি, সেতুবন্ধ, শিল্পী নামের তিনটি ছোট নাটক এ গ্রন্থভুক্ত।
প্র : কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গল্পগ্রন্থগুলোর নাম কর।
উ : ‘ব্যথার দান’ (১৯২২), ‘রিক্তের বেদন’ (১৯২৫), ‘শিউলিমালা’ (১৯৩১)।
প্র : ‘‘ব্যথার দান’ গল্পগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ছয়টি গল্প নিয়ে এ গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে। এটি নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ; প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ তো বটেই। গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলো : ব্যথার দান, হেনা, অতৃপ্ত কামনা, বাদল-বরিষণে, ঘুমের ঘোরে, রাজবন্দীর চিঠি। শেষ গল্পটি বাদে এই গল্পগুলোর ভাষা আবেগাশ্রয়ী, বক্তব্য নরনারীর প্রেমকেন্দ্রিক।
প্র : ‘রিক্তের বেদন’ গল্পগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় নজরুলের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘রিক্তের বেদন’। অন্তর্ভুক্ত গল্পগুলো, রিক্তের বেদনা, বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী, মেহের-নেগার, সাঁজের তারা, রাক্ষুসী, সালেক, স্বামীহারা, দুরন্ত পথিক। প্রতিটি গল্পই সমকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গল্পগুলোর প্রধান বিষয় প্রেম। তবে প্রেমকে কেন্দ্র করে পারিপার্শ্বিক ঘটনা ও মনোবেদনাসমূহও উল্লেখযোগ্য। এ গ্রন্থে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চিত্রায়ন করা হয়েছে।
প্র : ‘শিউলিমালা’ গ্রন্থের পচিয় দাও।
উ : ‘শিউলিমালা’ গল্পগ্রন্থ। পদ্ম-গোখরো, জিনের বাদশা, অগ্নি-গিরি, শিউলিমালা গল্পের সমন্বয়ে গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের কার্তিকে (১৯৩১)।
প্র : সংগীত বিষয়ক গ্রন্থাবলির উল্লেখ কর।
উ : চোখের চাতক, নজরুল গীতিকা, সুর সাকী, বনগীতি প্রভৃতি।
প্র : নজরুল ছায়াছবির সঙ্গে কবে থেকে যুক্ত হন?
উ : ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে পাইওনিয়ার ফিল্ম কোম্পানিতে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের সূচনা পর্যন্ত এ সংশ্লিষ্টতা ছিল্
প্র : তিনি কয়টি ছায়াছবির সঙ্গে কাজ করেছেন?
উ : যতটুকু জানা যায়, দশের অধিক। এগুলো হচ্ছে : বাংলা : ধ্রুব, পাতালপুরী, গ্রহের ফের, বিদ্যাপতি, গোরা, সাপুড়ে, চৌরঙ্গী, দিকশূল, অভিনয় নয়; হিন্দি : বিদ্যাপতি, সাপেড়া, চৌরঙ্গী ইত্যাদি।
প্র : ‘ধ্রুব’ ছায়াছবির সঙ্গে নজরুল জড়িত কীভাবে?
উ : নজরুল ‘ধ্রুব’ ছায়াছবির পরিচালকের দায়িত্ব পারন ছাড়াও গান রচনা, সুরারোপ, সঙ্গীত পরিচালনা করেন। তাছাড়া তিনি এ ছায়াছবিতে নারদের ভূমিকায় অভিনয় ও চারটি গানে অংশ নেন। এ ছায়াছবির কাহিনি রচনা করেন নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ। পাইনিওর ফিল্মের ব্যানারে ছবিটি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারির কলকাতার ক্রাউন টকি হাউজে (সিনেমা হলে) মুক্তি পায়।
প্র : কোন চলচ্চিত্রে নজরুল অভিনয় করেন ?
উ : ধ্রুব। নারদের ভূমিকায়।
প্র : তিনি কোন চলচ্চিত্রে কীভাবে জড়িত ছিরেন? কযেকটি তথ্য দাও।
উ : ‘ ধ্রুব’ চলচ্চিত্র (মুক্তি : ১৯৩৪) :
পরিচালক
গীতকার (১৭টি গান)
সুরকার (১৮টি গান)
সঙ্গীত পরিচালক
অভিনেতা (নারদ চরিত্রে)
কণ্ঠশিল্পী
‘পাতালপুরী’ (মুক্তি : ১৯৩৭) :
গীতিকার (৭টি গান)
সুরকার (৮টি গান)
সঙ্গীত পরিচালক
‘গ্রহের ফের’ (মুক্তি : ১৯৩৭)
সঙ্গীত পরিচালক
সুরকার (৬টি গান)
বিদ্যাপতি (বাংলা : মুক্তি : ১৯৩৮) :
কাহিনি রচনা
সুরকার
গীতিকার (৫টি গান)
বিদ্যাপতি (হিন্দ : মুক্তি : ১৯৩৮) :
কাহিনি রচনা
সুরকার
গোরা (মুক্তি : ১৯৩৮) :
সঙ্গীত পরিচালক
গীত রচনা (১টি গান)
সুরারোপ (১টি গান)
সাপুড়ে (মুক্তি : ১৯৩৯) :
কাহিনি রচনা
গীত রচনা (৭টি গান)
সুরারোপ (৭টি গান)
নন্দিনী (মুক্তি : ১৯৪১) :
গীত রচনা (১টি গান)
সুর রচনা (১টি গান)
চৌরঙ্গী (মুক্তি : ১৯৪২) :
গীত রচনা (৮টি গান)
সুরকার (৮টি গান)
সঙ্গতি পরিচালক
প্র : নজরুল ও মুজফ্ফর আহমদের যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকাটির নাম কী? এটি কবে প্রকাশিত হয়?
উ : নজরুল ও মুজফ্ফর আহমদের যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকাটির নাম ‘দৈনিক নবযুগ’, পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় ১২ই জুলাই ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে।
প্র : নজরুলকে বিদ্রোহী কবি আখ্যার কারণ কী?
উ : নজরুলের আবির্ভাবে বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম এক প্রবল প্রতিবাদের সুর ধ্বনিত হয় যা তৎকালীন কবিসমাজে প্রবল উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ কবি নজরুলের কাব্য থেকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা লাভ করেন। ‘অগ্নি-বীণা’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’, ‘ফণিমনসা’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থে নজরুলের স্বাদেশিকতা সাম্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। তিনি বিধাতার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন। এজন্যই তাঁকে বাংলা কাব্যসাহিত্যে বিদ্রোহী কবি বলা হয়ে থাকে। অবশ্য নজরুলকে ‘বিদ্রোহী’ কবি বলার ক্ষেত্রে তাঁর রচিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটিও প্রথমদিকে ভূমিকা রেখেছে। এর আগে তিনি ‘হাবিলদার নজরুল’ বলে পরিচয় দিতে আগ্রহী ছিরেন। নামের আগে লিখতেনও ‘হাবিলদার’। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশ হওয়ার পর নজরুলকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবি > বিদ্রোহী কবি > বিদ্রোহী-কবি বলে পরিচিতিজনরা অভিহিত করেছেন। পরে অবশ্য নজরুল স্বমহিমাতেই আবির্ভূত হন।
প্র : নজরুল ইসলাম প্রথম কবে ঢাকায় আসনে?
উ : ১৯২৬ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে।
প্র : কার সঙ্গে তিনি ঢাকায় এসেছিরেন এবং কেন?
উ : অবিভক্ত বঙ্গের স্বদেশি নেতা হেমন্তকুমার সরকারের সঙ্গে তিনি প্রথম ঢাকায় এসেছিরেন। এ আগমনে উদ্দেশ্য ছিল বেড়ানো।
প্র : এ সময় ঢাকায় তিনি কোথায় উঠেছিলেন?
উ : ঢাকার কাছারির নিকটবর্তী মোহিনীমোহন দাসের বাড়িতে নজরুল আতিথ্য গ্রহণ করেন।
প্র : ঢাকায় প্রকাশিত নজরুলের প্রথম লেখা কোনটি?
উ : এ ব্যাপারটি স্পষ্ট করে বলা মুশকিল। ১৩৩৩ বঙ্গাব্দে ‘অভিযান’ নামে একটি সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়। ওই পত্রিকায় ‘অভিযান’ নামে একটি কবিতা লেখেন নজরুল। মনে করা হয়, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এটি তাঁর প্রথম লেখা। পরে কবির ‘সিন্দু-হিন্দোল’ কাব্যগ্রন্থে কবিতাটি স্থান পায়।
প্র : নজরুল দ্বিতীয়বার কবে ঢাকায় আসেন?
উ : ১৯২৬ সালের অক্টোবর মাসে।
প্র : এই আগমনের উদ্দেশ্য কী?
উ : রাজনীতি। কবি ঢাকা বিভাগের মুসলিম কেন্দ্র থেকে ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য পদপ্রার্থী হন। নির্বাচনের প্রচারের জন্য এ সময় তিনি ঢাকায় আসেন।
প্র : এ সময় তিনি কোথায় উঠেছিরেন?
উ : বেচারাম দেউড়ির জনৈক মো. ইউসুফ কাদেরির বাড়িতে।
প্র : নজরুল মোট কয়বার ঢাকায় আসেন?
উ : ১৩ বার।
প্র : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল কতবার আসেন?
উ : ৫ বার।
প্র : নজরুল কবে এবং কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আগমন করেন?
উ : ১৯২৬ সালের ২৭শে জুন মুসলিম সাহিত্য সমাজের চতুর্থ বৈঠকে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সলি-মুল্লাহ মুসলিম হলে।
প্র : নজরুল কবে একং কী কারণে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেন?
উ : ১৯২৭ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রথম বার্ষিকী সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। সেবারও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয়বারও তিনি আসেন একই কারণে, সাহিত্য সমাজের সম্মেলন উদ্বোধন করতে ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
প্র : কবি সুস্থ অবস্থায় কবে সর্বশেষ ঢাকায় আসেন?
উ : ১৯৪০ সালের ১২ই ডিসেম্বর। সেবারও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিরেন।
প্র : কবির কবিতা ‘জয়দেবপুরের পথে’ কখন লেখা হয়?
উ : নজরুল নির্বাচনের প্রচারের কাজে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর যাবার সময় জ্যোৎøা রাতে ‘জয়দেবপুরের পথে’ নামে একটি কবিতা লেখেন। পরে তিনি এ কবিতাটি পরিমার্জনা করে নাম দেন ‘চাঁদনী রাতে’। এটি ‘সিন্ধু-হিন্দোল’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়। কবিতাটি আবদুল কাদির তাঁর ‘জয়তী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ করেন।
প্র : তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভারত সরকার কর্তৃক কোন কোন পদক দেয়া হয়?
উ : যথাক্রমে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৪৫) ও ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৬০) পদক দেয়া হয়।
প্র : ডি-লিট পদক ‘রবীন্দ্রভারতী’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে কখন দেয়া হয়?
উ : যথাক্রমে ১৯৬৯ সাল ও ১৯৭৪ সালে।
প্র : কত সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে ’২১শে পদক’ প্রদান করেন?
উ : বাংলাদেশ সরকার ‘একুশে পদক’ দেন ১৯৭৬ সালে।
প্র : বিবিসির বাংলা বিভাগ কর্তৃক জরিপকৃত (২০০৪) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় নজরুলের স্থান কত?
উ : তৃতীয়।
প্র : তাঁর মৃত্যুসাল কত?
উ : ২৯শে অগস্ট, ১৯৭৬; ১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ।

Exit mobile version