প্র : কবি কায়কোবাদের জন্ম কত সালে?
উ : ১৮৫৭ সালে।
প্র : তাঁর জন্ম কোথায় হয়?
উ : আগলা পূর্বপাড়া গ্রাম, নবাবগঞ্জ, ঢাকা।
প্র : তিনি মূলত কী ছিলেন?
উ : কবি।
প্র : কায়কোবাদের প্রকৃত নাম কী?
উ : কাজেম আল কোরেশী।
প্র : তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
উ : বাল্যের গৃহশিক্ষা শেষ করে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ভর্তি হন। পরে ‘ঢাকা মাদ্রাসা’ থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন।
প্র : কোন কোন কবির কাব্যপ্রভাব তাঁর উপর বেশি ছিল?
উ : হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেন।
প্র : তাঁর কবিত্ব শক্তির বিকাশ ঘটে কোন কাব্য রচনা করে?
উ : মাত্র তের বছর বয়সে ‘বিরহ-বিলাপ’ (১৮৭০) লিখে। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
প্র : তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ দুটো কী কী?
উ : গীতিকাব্য: ‘অশ্রুমালা’ (১৮৯৫), মহাকাব্য: ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৫)।
প্র : বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম মহাকাব্য রচয়িতা কে?
উ : কায়কোবাদ।
প্র : বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা কে?
উ : কায়কোবাদ।
প্র : আধুনিক বাংলাসাহিত্যে প্রথম মুসলিম কবি কে?
উ : কায়কোবাদ।
প্র : কায়কোবাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : কায়কোবাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিরহ-বিলাপ’ (১৮৭০)। তবে অনেক সমালোচকই কাব্যটির নাম ‘বিরহ বিলাস’ বলেছেন। কবি অবশ্য বলেছেন: ‘আমি যখন বার বৎসর বয়স্ক বালক সেই সময় আমার বিরহ-বিলাপ নামক ক্ষুদ্র একখানা কাব্য প্রকাশিত হয়।’ কাব্যগ্রন্থটি আজ দু®প্রাপ্য।
প্র : ‘অশ্রুমালা’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : কায়কোবাদের খন্ড কবিতাগ্রন্থ ‘অশ্রুমালা’ (১৮৯৬)। এই কাব্যগ্রন্থের মূল সুর প্রেম। তবে প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণবোধও এ কাব্য খুব লক্ষ করা যায়। এই গ্রন্থে কোন তত্ত্ব নেই, আছে মানব মনের আবেগ, আনন্দ-বিরহ, প্রেম-বেদনা ইত্যাদির স্বাভাবিক প্রকাশ। কবি লিখেছেন: ‘ইচ্ছা হয় তারে নিয়ে/বনবাসী হই/চাইলে এ লোকালয়/এ যে বড় বিষময়।’ সহজ উপস্থাপনা ও সরলতাই এ কাব্যগ্রন্থের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
প্র : ‘মহাশ্মশান’ গ্রন্থটির পরিচয় দাও।
উ : কায়কোবাদের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৫)। কাব্যটি ধারাবাহিকভাবে মহম্মদ রওশন আলী সম্পাদিত ‘কোহিনূর’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ (১৭৬১) অবলম্বনে কাব্যটি রচিত। কাব্যের তিনটি খন্ড। প্রথম খন্ড ২৯ সর্গ, দ্বিতীয় খন্ড ২৪ সর্গ, তৃতীয় খন্ড ৭ সর্গ বিশিষ্ট। প্রধান চরিত্রগুলো: এব্রাহিম কার্দি, জোহরা বেগম, হিরণ বালা, আতা খাঁ, লঙ্গ, রতœজি, সুজাউদ্দৌলা, সেলিনা, আহমদ শাহ্ আব্দালী। এই চরিত্রগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক-অনৈতিহাসিক দু ধরনেরই আছে। চরিত্রসৃজনে হিরণ বালা শ্রেষ্ঠ। প্রেমিক আতা খাঁ নিজ পরিচয় গোপন অর্থাৎ প্রতারণার আশ্রয় নিলেও হিরণ বালা জোহরার মত ধর্মনিষ্ঠ থাকে নি। বরং আধুনিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য মানবতাবোধের আলোকে সে বলেছে: ‘নিজে প্রেমময়/জগদীশ, প্রেম শ্রেষ্ঠ সর্বধর্ম হতে/হিন্দু মুসলমান করে সৃজেছে কি বিধি/জীব শ্রেষ্ঠ মানবেরেÑতোমারে আমারে?’ অথচ জোহরা প্রাণাধিক স্বামীর চেয়ে ধর্মকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এব্রাহিম কার্দি বাহ্যিক কর্তব্যকর্ম করলেও স্ত্রীর প্রতি কর্তব্যকর্মে ব্যর্থ। ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য হিসেবে পরিচিত হলেও একে পরিপূর্ণ মহাকাব্য বলা যায় না। মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্যগুলো এখানে সার্বিকভাবে প্রতিফলিত নয়। একে কাহিনিকাব্য বলা চলে। মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তরে’র কাহিনি-উৎস এই গ্রন্থ।
প্র : কোন ঘটনা অবলম্বনে ‘মহাশ্মশান’ কাব্য রচিত হয়?
উ : পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কাহিনি অবলম্বনে।
প্র : তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের নাম লেখ।
উ : ‘কুসুমকানন’ (১৮৭৩), ‘শিবমন্দির’ (১৯২১), ‘অমিয়ধারা’ (১৯২৩) প্রভৃতি।
প্র : নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ কর্তৃক ১৯৩২-এ কোন উপাধিগুলো তিনি পান?
উ : ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরতœ’।
প্র : তিনি কলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের মূল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কত সালে?
উ : ১৯৩২ সালে।
প্র : তাঁর মৃত্যুতারিখ লেখ।
উ : ২১শে জুলাই, ১৯৫১।