প্র : কৃত্তিবাস ওঝা কে?
উ : বাল্মীকির রামায়ণের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ অনুবাদক। তাঁর এ রামায়ণকে শ্রীরাম পাঁচালিও বলা হয়। মৈথিলি ব্রাহ্মণদের অসমিয়া ভাষায় ওঝা বলা হয়। ওঝা শব্দটি এসেছে ‘উপাধ্যায়’ থেকে।
প্র : কৃত্তিবাসের পদবি কী ছিল?
উ : কৃত্তিবাসের পদবি ছিল মুখোপাধ্যায়।
প্র : প্রথম বাংলা রামায়ণ অনুবাদক কে ছিলেন? তাঁর কাব্যের কাহিনি উৎস উল্লেখ কর।
উ : বাংলা রামায়ণের আদি কবির নাম কৃত্তিবাস ওঁঝা। কবির কাব্যের ‘আত্ম-পরিচয়’ অংশ থেকে তাঁর বংশ পরিচয় পাওয়া যায়। আত্ম-পরিচয় অংশে কবি বলেছেন ‘আদিত্যবার শ্রীপঞ্চমীপূর্ণ (পুণ্য) মাঘ/তিথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস।’ যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি মনে করেন ১৩৮৬-১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কৃত্তিবাসের জন্ম হয়। তাই মোটামুটি ১৪০০ থেকে ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দ অর্থাৎ পনের শতকের কবি তিনি। নদীয়া জেলার ফুলিয়া গ্রামের মুখুটি বংশে তাঁর জন্ম। ‘কৃত্তিবাস’ তাঁর পিতামহ প্রদত্ত নাম।
প্র : কৃত্তিবাসের অনূদিত রামকাহিনির নাম কী ছিল? তাঁর কাব্যের মৌলিকতা কোথায়?
উ : শ্রীরাম পাঁচালি। কৃত্তিবাসী রামায়ণের কয়েকটি আখ্যান কবি হলেও কল্পিত। বেশ কিছু মৌলিক অংশ আছে। বীরবাহুর যুদ্ধ, তরণীসেনের কাহিনি, মহীরাবণ-অহীরাবণের কথা, রামের অকালবোধন, হনুমান কর্তৃক রাবণের মৃত্যুবান হরণ, মৃত্যুপথযাত্রী রাবণের কাছে রামচন্দ্রের শিক্ষা, সীতার রাবণমূর্তি অঙ্কন ও রামের সন্দেহ, লব-কুশের যুদ্ধ প্রভৃতি কৃত্তিবাসের সৃষ্টি। পরবর্তীকালে দাশরথি রায় তাঁর পাঁচালিতে এবং গিরিশচন্দ্র ঘোষ তাঁর নাটকে এই ঘটনাক্রম গ্রহণ করেন।
প্র : কৃত্তিবাসী রামায়ণ কার উদ্যোগে কোন্ বছর সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয়?
উ : শ্রীরামপুরের খ্রিষ্টান মিশনের প্রাচ্য ভাষাবিদ উইলিয়াম কেরির উদ্যোগে কয়েক খ- ১৮০২-০৩’ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম কৃত্তিবাসী রামায়ণ শ্রীরামপুর মিশনের প্রেস থেকে প্রথম মুদ্রিত হয়।
প্র : “কৃত্তিবাস কীর্তিবাস কবি, এ বঙ্গের অলঙ্কার।” -কৃত্তিবাস সম্পর্কে এ মন্তব্য কে করেছিলেন?
উ : এ মন্তব্য করেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
প্র : কৃত্তিবাসী রামায়ণকে বাঙালির জাতীয় কাব্য বলা হয় কেন?
উ : বাল্মীকির শালপ্রাংশু মহাভুজ রামচন্দ্র কৃত্তিবাসের লেখনীর স্পর্শে হয়ে গেছেন-‘নবজলধর শ্যাম’। তুলসীচন্দনে লিপ্ত এই বিগ্রহ আমাদের সামাজের সঙ্গে আদ্যোপান্ত মিলে মিশে আছেন। অযোধ্যার রাজপরিবার যেন বাঙালির একান্নবর্তী পরিবার, যেখানে শত দুঃখে মুখ বুজে সংসার করছেন বাঙালি কুলবধূর প্রতিরূপ জানকী সীতা। তিনি আর্যনারীর মতো সবলা নন। রাবণের ভয়ে তিনি ‘কাঁপেন যেন কলার বাগুড়ি।’ ভরত লক্ষ্মণ আমাদেরই সগোদর। কৌশল্যাও বাঙালি মায়ের আদলে তৈরী। ‘লাজে অধোমুখি সীতা’; দেবর লক্ষ্মণকে রেঁধে খাইয়েছেন বাঙালির খাদ্য। গুহকের গৃহে ভরত যা খেয়েছেন এবং ভরদ্বাজ ঋষি বানরবাহিনীকে যেসব ভোজ দিয়ে তৃপ্ত করেছেন, সে সবই বাংলাদেশের লোভনীয় খাদ্যসম্ভার। ভাত, লুচি, গুড়পিঠে, পুলি, পায়েস, রোহিত চিতল মাছের উল্লেখ করেছেন কৃত্তিবাস। এদেশের আটচালাঘর স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। বাঙালির কাছে কৃত্তিবাসী রামায়ণ বঙালির জীবনরস সমৃদ্ধ একখানি ভক্তিগ্রন্থই নয় তার যাপিত জীবনের কাব্য।
প্র : কৃত্তিবাস কোন রাজার রাজসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন বলে অনুমিত?
উ : এ বিষয়ে প-িতমহলে বিতর্ক আছে বিতর্কের কারণ কৃত্তিবাস তাঁর ‘আত্মপরিচয়’ অংশে জনৈক গৌড়িশ্বরের উল্লেখ করেছেন। ড. দীনেশচন্দ্র সেন ও ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে এই গৌড়েশ্বর ছিলেন রাজা গণেশ। আবার বসন্তরঞ্জন রায় বলেন যে ইনি গণেশপুত্র যদু বা তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ। ড. সুকুমার সেনে মতে ইনি সুবুদ্ধি রায় বা সেন বংশীয় দনুজমাধব কিংবা চট্টগ্রামের দনুজমর্দন হতে পারেন।