বাগধারা

গ দিয়ে বাগধারা ও বাক্য প্রয়োগ তৈরি

গা ঢাকা (আত্মগোপন) : পুলিশের ভয়ে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছে।
গা ঢাকা দেওয়া (আত্মগোপন করা): খুনী ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছে, পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।
গা ঢালা (হতাশা) : চাকরিটা না পেয়ে বান্টি গা ঢেলে দিয়েছে।
গা তোলা (উঠা): এখন গা তুলুন, ট্রেনের সময় হয়েছে।
গা-করা (মনোযোগ দেওয়া): পরের কাজ হলেও গা-করা দরকার নচেৎ সব পন্ডশ্রম হবে।
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল (প্রাপ্তির আগেই কাজের আয়োজন) : ভর্তির জন্য তদবির অথচ পরীক্ষার ফল বের হয়নি গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল (প্রাপ্তির পূর্বেই ভোগের আয়োজন): তোমার চাকরি হল তবে তুমি খাওয়াবে, আমাদের সেই আশায় বসে থাকতে হবে। এ যে গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেলের ব্যাপার।
গাছে তুলে মই সরানো (কাজে নামিয়ে সরে পড়া): বন্ধুরা স্কুল করার কাজে নামিয়ে পালিয়েছে, এ যে দেখছি গাছে তুলে মই সরানো।
গাছে না উঠতেই এক কাঁদি (কাজ না করে ফল চাওয়া): কাজ না করেই টাকা চাও এ যে দেখছি গাছে না উঠতেই এক কাঁদি।
গাছেরও খায় তলারও কুড়ায় (সব আত্মসাৎ করা): সরকারি চাকরিতে পদস্থ কোন কোন ব্যক্তি গাছেরও খান, তলারও কুড়ান।
গায়ে আঁচ না লাগা (কোন ক্ষতি না হওয়া) : বোনের বিয়েতে ভাইয়েরা সব করল, বাবার গায়ে এতটুকু আঁচ লাগতে দেয়নি।
গায়ে কাঁটা দেওয়া (রোমাঞ্চিত হওয়া): নির্জনে গোরস্থানে দুপুর রাতে যাবার কথা শুনে দুর্দান্ত জলিলের গায়ে কাটা দিয়ে উঠল।
গায়ে কাঁটা দেয়া (রোমাঞ্চ হওয়া) : ভূতের গল্প শুনলে অনেকের গায়ে কাঁটা দেয়।
গায়ে গায়ে শোধ (দেনা না দেয়া-ও প্রাপ্য না লওয়া অথচ দেনা পাওনার শোধবোধ): তুমি আমার নিকট একশত টাকা পাবে, তা তোমার খোরাকি বাবদ খরচ করে গায়ে গায়ে শোধ দিতে চাই।
গায়ে পড়া (অযাচিত) : মজনুর গাছে পড়ে ঝগড়া করার স্বভাবটা গেল না।
গায়ে পড়া (অযাচিত): তোমার গায়ে পড়া কথায় কি আসে যায়, আমরা মোটেই তাতে কোন গুরুত্ব দেই না।
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো (অন্তহীন লোক): পরীক্ষায় ফেল করে গায়ে ফুঁদিয়ে বেড়াচ্ছ, ভায়া তোমার কি ভাবনার অন্ত নেই?
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো (আরামে সময় কাটানো) : গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ালে পরীক্ষায় ফেল করবে।
গায়ে মানে না আপনি মোড়ল (গ্রামবাসী না মানলেও নিজেই নিজেকে কর্তা বলে জাহির করা): তুমি বাপু ফপর দালালী করছে কেন-গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল হয়ে বসেছ দেখছি।
গায়ের ঝাল ঝাড়া (শোধ লওয়া): আর কিছু পারি বা না পারি, কুকথায় পঞ্চমুখ হয়ে গায়ের ঝাল ঝাড়তে পারব।
গোঁফ খেজুরে (অলস) : তোমার গোঁফ খেজুরে লোক দিয়ে মহৎ কাজ সম্ভব নয়।
গোঁফখেজুরে (অলস): গোঁফখেজুরে যারা তাদের চিরদিনই অনুতাপানলে দগ্ধীভূত হতে হয়।
গোঁয়ারগোবিন্দ (কান্ডজ্ঞানহীন মানুষ): গোঁয়ারগোবিন্দের মত কাজ করলে ঠকতে হয়।
গো বেচারা (নিরীহ) : গো বেচারা সেজে বসে থাকলে জীবনে কষ্ট পেতে হয়।
গোকুলের ষাঁড় (বেকার, ভবঘুরে): চৌধুরী সাহেবের মেঝো ছেলেটি লেখাপড়াও শিখেনি, অপর কোন কাজকর্মও করে না, গোকুলের ষাঁড় হয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়।
গোকুলের ষাঁড় (স্বেচ্ছাচারী) : মহল্লায়-মহল্লায় আজকাল বহু যুবককে গোকুলের ষাঁড়ের মতো ঘুরতে দেখা যায়।
গো-বৈদ্য (হাতুড়ে): ইসলাম সাহেবের মেয়ে এবারে এক গো-বৈদ্যের হাতে পড়ে মরতে বসেছিল।
গোবর গণেশ (অকর্মণ্য): বড়লোকের ছেলেদের রোজগার করে খেতে হয় না বলে তারা প্রায়ই গোবর গণেশ হয়ে থাকে।
গোবর গনেশ (মূর্খ) : সে একটা গোবর গনেশ। দুনিয়ার কোনো খোঁজ রাখে না।
গোবরে পদ্মফুল (নিচকলে মহৎলোক) : রহিম সাহেবের মতো গোবরে পদ্মফুল খুব কম দেখা যায়।
গোবরে পদ্মফুল (নীচকুলে মহৎ ব্যক্তি): কৃষকের ঘরে এমন দয়ালু ও শিক্ষিত ছেলে এ যে দেখছি গোবরে পদ্মফুল।
গো-মূর্খ (নিরেট মূর্খ বা বর্ণজ্ঞানহীন): হারিম সাহেবের গো-মূর্খ ছেলেটার এমন রূপসী গুণবতী বৌ জুটলো, একেই বলে ভাগ্য।
গোল্লায় যাওয়া (নষ্ট হওয়া): ক্যাপ্টেন সাহেবের অমন তুখোড় ছেলে গোল্লায় গিয়েছে, সে চুপে চুপে মদ খায়।
গোল্লায় যাওয়া (নষ্ট হওয়া) : বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ছেলেটা গোল্লায় গিয়েছে।
গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা (জ্ঞাতসারে ক্ষতি করে পর সংশোধনের প্রয়াস): ছাত্র হয়ে পরীক্ষার হলে ওস্তাদের গায়ে হাত দিয়ে পরে ক্ষমা প্রার্থনা কর। এ যে দেখছি গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা।
গোড়ায় গলদ (শুরুতেই ভুল) : জমি না কিনে সার কিনেছ, এ দেখছি গোড়ায় গলদ।
গোড়ায় গলদ (শুরুতেই ভুল): ওহে তোমার দিনতো খারাপ, তা নইলে কি গোড়ায় গলদ হয়?
গোয়ার গোবিন্দ (কা-জ্ঞানহীন) : তাজের মতো গোয়ার গোবিন্দ লোক দিয়ে কোন কাজই আশা করা যায় না।
গৌরী সেনের টাকা (বেহিসেবি অর্থ) : গৌরী সেনের টাকা দু’হাতে খরচ করেও শেষ করা যায় না।
গৌরচন্দ্রিকা (ভূমিকা) : গৌরচন্দ্রিকার দরকার নেই, আসল কথা বল।
গৌরচন্দ্রিকা (ভূমিকা): গৌরচন্দ্রিকা না করে আসল কথা বল বাপু।
গৌরীসেনের টাকা (অফুরন্ত অর্থ): ভায়া, একি গৌরীসেনের টাকা পেয়েছ যে, এক ধারছে খরচ করছ, রেখে ঢেকে খরচ কর।
গড্ডালিকা প্রবাহ (অন্ধ অনুকরণ): গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চললে জীবনে উন্নতির কোন আশা নেই।
গড্ডালিকা প্রবাহ (অপরের অন্ধ অনুসরণ) : গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে কোন লাভ নেই।
গণেশ উল্টান (তুলে নেওয়া): কয়েক বছর যেতে না যেতেই দোকানটি গণেশ উল্টিয়েছে।
গণেশ উল্টানো (সমূলে উঠে যাওয়া) : বেহিসেবি লোকটি মূলধন শেষ করে ব্যবসায় গণেশ উল্টাল।
গদাই লস্করী চাল (আলসেমী): ওহে, তাড়াতাড়ি হাত চালাও, অমন গদাই লস্করী চালে কাজ করলে সব পন্ড হবে।
গদাই লস্করী চাল (মন্থর গতি) : গদাই লস্করী চাল না ছাড়লে ১০টার ট্রেন ধরা যাবে না।
গন্ধে টের পাওয়া (অনুমানে জানা) : তোমাদের বাড়িতে যে আজ বিশাল আয়োজন হবে তা আমি গন্ধেই টের পেয়েছি।
গন্ধমাদন বয়ে আনা (অবাস্তব বিষয়ের অবতারণা): প্রশ্নে চেয়েছে কি আর তুমি গল্পটা আগাগোড়া লিখে একেবারে গন্ধমাদন বয়ে এনেছ।
গভীর জলের মাছ (খুব চতুর ব্যক্তি) : খালেক সাহেবের মতো গভীর জলের মাছকে চেনা কঠিন।
গভীর পানির মাছ (ধূর্ত): রহমত আলীতো গভীর পানির মাছ, তার মর্ম বোঝা মুষ্কিল।
গরু খোঁজা (তন্ন তন্ন করে খোঁজা) : হারানো ছেলেটিকে গরু খোঁজা করার পর অবশেষে পাওয়া গেল।
গুরু মারা বিদ্যা (যার কাছে শিক্ষা তাকে পরাজিত করার কৌশল) : ছাত্র হয়ে শিক্ষকের ভুল ধরা-এ গুরু মারা বিদ্যা শিখলে কোথায়?
গরু মেরে জুতা দান (বড় ক্ষতি করে সামান্য পূরণ) : বিধবার সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করে তাকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে-এ যেন গরু মেরে জুতা দান।
গরিবের ঘোড়া রোগ (অসম্ভব আশা পোষণ করা) : ঠিক মতো খেতে পায় না, কিনতে চায় মটর গাড়ি, এ যেন গরিবের ঘোড়া রোগ।
গর্দভ রাগিণী (মাধুর্যহীন চিৎকার) : প্রতিদিন তোমার গর্দভ রাগিণী শুনতে ভালো লাগে না। একটু রেহাই দেও।
গলগ্রহ (পরের করুণার পাত্র) : অন্যের গলগ্রহে থাকাটা খুবই কষ্টের।
গলগ্রহ (পরের বোঝা হয়ে থাকা): অনেক দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি পুত্র ও পুত্রবধূর গলগ্রহ হয়ে রয়েছে।
গলায় গামছা দেয়া (অপমান করা) : এই মাসে পাওনা টাকা না পেলে গলায় গামছা দিয়ে আদায় করব।
গলায় গলায় (গভীর মিল) : দুই বন্ধুর গলায় গলায় ভাব থাকা সত্ত্বেও সম্পর্কে চিড় ধরেছে।
গলায় গলায় ভাব (নিবিড় বন্ধুত্ব) : শাকিলের সাথে শহিদের গলায় গলায় ভাব থাকায় এখনও বন্ধুত্ব অটুট আছে।
গড়িমসি করা (দীর্ঘসূত্রিতা) : কোন কাজে গড়িমসি করলে ফলাফল ভালো হয় না।
গুড়ে বালি (আশায় নিরাশ হওয়া) : আজাদের পিছনে ঘুরে টাকা পাওয়ার আশা গুড়ে বালি ছাড়া কিছুই নয়।
গুড়ে বালি (আশায় নিরাশ হওয়া): তুমি কি মনে করেছ যে, আমার কাছে টাকা ধার পাবে, সে গুড়ে বালি।

তথ্যসূত্র: পুরাতন বইয়ের দোকান/লাইব্রেরি হতে বিভিন্ন লেখকের বাংলা ব্যাকরণ বই সংগ্রহ করে তা এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

Exit mobile version