Friday, October 4, 2024

ণত্ব বিধান

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত বা তৎসম শব্দে মূর্ধন্য ব্যবহারের বিধিকেই ণত্ব বিধান বলে। মূলত সংস্কৃত শব্দের বানানের কোন পরিবর্তন বাংলাতে হয় না। সেই হিসেবে এই নিয়ম বাংলা বানানের কোন নিয়ম নয়। বাংলায় ব্যবহার করা হয় বলেই এটা বাংলা ভাষাভাষীর জানা প্রয়োজন। ণত্ব বিধানের নিয়ম ও উদাহরণ নিচে দেখানো হলো:

(i) ট বর্গের পূর্ব অবস্থিত দন্ত-ন মূর্ধন্য হবে। অর্থাৎ ট, ঠ, ড, ঢ এর পূর্বের দন্ত-ন মূর্ধন্য হবে। যেমন: কণ্টক, বণ্টন (ট), লুণ্ঠন, কণ্ঠ, অবগুণ্ঠন (ঠ), দ-, গ-, প-, পি-ি, প্রকা- (ড), পন্ডিত, চ-ী, ডান্ডা, পা-ুলিপি, ম-ন (ড) ইত্যাদি।

(ii) ঋ, র, ষ র-ফলা, রেফ, ক্ষ-এর পর যদি প্রত্যয়ান্ত-ন হয় তবে তা মূর্ধন্য হবে।

ঋ: ঋণ, ঘৃণা, তৃণ।

র: আচরণ, তোরণ, পুরাণ, শরণ, সাধারণ, ব্যাকরণ, করণ, উদাহরণ, ভরণ, তরুণ, মরণ, উচ্চারণ, করণীয়, প্রেরণা, ক্ষরণ, আবরণ, বরণ, বারণ, সন্তরণ, আহরণ, চরণ, চারণ ইত্যাদি।

র-ফলা: ঘ্রাণ, চিত্রণ, প্রণেতা, ভ্রূপ, মুদ্রণ, শ্রেণী, প্রাণ, নিয়ন্ত্রণ, প্রণালী, ত্রাণ, নিমন্ত্রণ, প্রণয়ন, প্রণাম ইত্যাদি।

রেফ: বিকীর্ণ, স্বর্ণ, আকীর্ণ, চূর্ণ, দীর্ণ, কর্ণ ইত্যাদি।

ষ: তোষণ, পোষণ, বিশেষণ, শোষণ, গবেষণা, এষণা, ঘোষণা ইত্যাদি।

ব্যতিক্রম: মূর্ধন্য-ষ ও মূর্ধন্য-ণ যুক্ত বর্ণ গঠন করলে তার রূপ হয় এরকম উষ্ণ, কৃষ্ণ, তৃষ্ণা, সহিষ্ণু, বিষ্ণু ইত্যাদি।
ক্ষ (ক + ষ) ক্ষণ, দক্ষিণ, তীক্ষè, বিচক্ষণ, ভক্ষণ, সমীক্ষণ, প্রদক্ষিণ ইত্যাদি।

(iii) একই পদের মধ্যে প্রথমে ঋ, ঋ-কার, র, ষ ও পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, ষ, ব, হ কার ও অনুস্বার ব্যবধান থাকলে এবং তার পরে দন্ত ন থাকলে এক্ষেত্রে দন্ত ন মূর্ধন্য-ণ হয়ে যাবে।
যেমন : করণ ( > কর + অন), দর্পণ, শ্রবণ, হরিণ, বক্ষমাণ, বুক্সিণী, বিষাণ, নির্বাণ, কৃপণ, রেণু, লহ্মণ ইত্যাদি।
তবে ঝ, র, ষ-এর পরবর্তী দন্ত ন-র মধ্যে উপরোক্ত বর্ণ ব্যতিরেকে অন্য বর্ণের ব্যবধান থাকলে অর্থাৎ মধ্যে ন্য বর্ণ থাকলে ণ-ত্ব বিধান কার্যকরী হবে না। যেমন- মর্দন, দর্শন, প্রার্থনা, কর্তন, অর্চন, রচনা, রঞ্জনা ইত্যাদি।

(iv) সন্ধি, সমাস, উপসর্গ ও প্রত্যয় সাধিত শব্দে কখনো মূর্ধন্য-ণ হয় আবার কখনো দন্ত-ন হয়।
ক. পরি, প্র, নির-উপসর্গের পর মূর্ধন্য-ণ হবে। যেমন : পরিণত, প্রণয়, নির্ণয়, নির্ণীত ইত্যাদি।
খ. র-এর পর অয়ন থাকলে মূর্ধন্য-ণ হবে। যেমন : উত্তরায়ণ, নারায়ণ, পরায়ণ।
গ. অপর, পরা, পূর্ব-এর পূর্বে অহ্ন থাকলে ণ হবে। যেমন : অপরাহ্ণ, পরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ।
কিছু সাধিত শব্দে ণত্ব বিধান কার্যকরী নয়।
যেমন : অগ্রনায়ক, পরনিন্দা, পরান্ন, রূপবান, শ্রীমান, প্রনষ্ট, হরিনাম, চিরনিদ্রা, ত্রিনেত্র, দুর্নিবার, দুর্নীতি, নিরন্ন, নিষ্পন্ন ইত্যাদি।

(v) তদ্ভব শব্দে মূর্ধন্য-ণ থাকবে না।

তৎসমতদ্ভব
এক্ষণএখন
প্রণামপেন্নাম
বর্ণবরন
বর্ষণবরিষন
ব্রাহ্মণবামুন
লবন নুন
কর্ণকান
ক্ষণিকখানিক
গণনাগোনা
ঘৃণাঘেন্না
দক্ষিণদখিনা
শ্রাবণশাওন

(vii) বিদেশী শব্দে মূর্ধণ্য-ণ হবে না। যেমন : কেরানি, ইরান, কনফারেন্স, রানার, হারমোনিয়াম, রেনেশাঁস ইত্যাদি।

(viii) ক্রিয়াপদে ণ হবে না। যেমন : করানো, করেন, ধরুন, মারেন, পরানো, চরানো ইত্যাদি।

Related Articles

Latest Articles