পদাশ্রিত নির্দেশক কাকে বলে ও এর উদাহরণ:
বিশেষ্য পদকে নির্দিষ্ট করে নির্দেশ করার নিয়ম রয়েছে বাংলা ভাষায়। ইংরেজি ভাষায় যেমন Article আছে, বাংলায় তেমন রয়েছে পদাশ্রিত নির্দেশক। বাংলায় কতকগুলো শব্দ বা শব্দাংশ যা বিশেষ্যের (বিশেষ্যের পূর্বে সংখ্যাবাচক বিশেষণের সাথে) সাথে যুক্ত হয়ে পদার্থ বা বস্তুর (বিশেষ্য) গুণ বা প্রকৃতি নির্দেশ করে। এই শব্দ বা শব্দাংশকে পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। যেমন- বাড়িখানা, মানুষটি, মানুষ দুটি ইত্যাদি।
বাংলায় টা, টি, টুকু, টুক্, খানা, খানি, জন ইত্যাদি পদাশ্রিত নির্দেশক রয়েছে। ইংরেজিতে তিনটি Article: A, An & The. এর মধ্যে The হল Definite Article বা নির্দিষ্ট আর বাকি দুটি অনির্দিষ্ট। বাংলায় পদাশ্রিত নির্দেশক Article এর চেয়ে একটু ভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। সংখ্যাবাচক ও পরিমাণবাচক হিসেবে পদাশ্রিত নির্দেশক ব্যবহৃত হয়।
টা ও টি, টে: টা সাধারণ অর্থে কখনো অবজ্ঞা অর্থে ব্যবহৃত হয়- লোকটা, ছেলেটা। টি সুন্দর অর্থে বোঝায় (সাধারণত)- ছেলেটি বা মেয়েটি সুন্দর করে কথা বলে। এই ব্যবহার বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত। সংখ্যাবাচক বুঝাতে টি ব্যবহৃত হয়- একটি, দুটি।
‘সে’ অথবা ‘এ’ শব্দের পরে টা ব্যবহৃত হয়। যেমন- সেটা, এটা। তবে ‘সেই’ ও ‘এই’ এর পরে টা না হয়ে টে হয়-সেইটে, এইটে অর্থাৎ টা পরিবর্তন হয়ে টে হয়।
টু, টুকু, টুক্, টুকুন : (পরিমাণবাচক পদাশ্রিত নির্দেশক)
টু: একটু পানি দাও। একটু বসতে পারি? (সামান্য পরিমাণ ও সময় অর্থে)।
টুকু: জলটুকু বা দুধটুকু খেয়ে নাও। (পরিমাণ জ্ঞাপক অর্থে)
এইটুকু দুধের খাবো কি?
টুক্: দুধটুক্ বিড়ালে খেয়েছে। টুক্ পরিমাণ অর্থে, তবে অল্প পরিমাণ ও অবজ্ঞা অর্থে।
টুকুন: মা বললো, দুধটুকুন খেয়ে নাও বাবা- (টুকুন স্বল্পতম পরিমাণ ও স্নেহবোধক)
‘খানা’ ও ‘খানি: খানা সাধারণত বড় আতয়নের জিনিস ও খানি ছোট আয়তনের জিনিসকে বুঝায়। যেমন- কাপড়খানা খুব সুন্দর। গামছাখানি ভালো। তার মুখখানি বেশ উজ্জ্বল।
অনুরূপ দেহখানা, শরীরখানা, হাতখানা- (দেহ সৌন্দর্য ও সমজাতীয় ভাবের কল্পনায়) বৃত্তকার ভাব কল্পনায়- দেহটি, শরীরটি, হাতটি।
গুণবাচক বস্তুর সাথে কখনো খানা-খানির প্রয়োগ হয়- ভাবখানা ভালো নয়।
গাছ, গাছা, গাছি: গাছ অর্থ বৃক্ষ। এই নির্দেশকটি অখন্ড, সরু বা দীর্ঘ বস্তুর নামে ব্যবহৃত হয়- লাঠিগাছি, খড়গাছ, আখগাছা।
গোটা, গুটি: গোটা হ্রস্বার্থে ব্যবহৃত- গোটা টাকাটা, গোটা পাঁচেক টাকা। গুটি গোটারই সমজাতীয়- গুটি পাঁচেক ছোকরা।
এছাড়া আরো কিছু নির্দেশক রয়েছে যা সংখ্যাবাচক বিশেষণের সাথে ব্যবহৃত হয়। এই পৃষ্ঠাটি বচনের শেষে হবে।
জন: মানুষবাচক শব্দে- মানুষজন, ভদ্রজন ইত্যাদি।
খান: বস্ত্রবাচক- কাপড় দুখান, দুখান গরদ, তিনখান ভেলভেট।
তা: কাগজ নির্দেশক- তিন তা কাগজ।
কেতা: টাকা নির্দেশক- পাঁচ কেতা নোট।
গণ, সকল, সমূহ, নিচয়, বৃন্দ ইত্যাদি শব্দগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সাধারণভাবে সমস্ত প্রকার বিশেষ্যের সাথে ব্যবহৃত হতে পারে। আবার কতকগুলো কেবল বিশেষ বিশেষ অর্থের বিশেষ্য পদের সাথে যুক্ত হয়।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সমষ্টিবাচক শব্দগুলোর বহুবচনে প্রয়োগ:
গণ: দেবতাগণ, মনুষ্যগণ।
কুল: প্রাণিবাচক- প্রাণিকুল।
আবলী: অপ্রাণিবাচক- পদাবলী, কবিতাবলী, নামাবলী।
গ্রাম: অপ্রাণী ও প্রাণিবাচক।
চয়: অপ্রাণিবাচক- বস্তুচয়।
জন: প্রাণিবাচক-লোকজন, ভদ্রজন।
দাম: অপ্রাণিবাচক-পুষ্পদাম, লতাদাম।
নিকর: অপ্রাণিবাচক।
নিচয়: অপ্রাণিবাচক-বস্তুনিচয়।
মন্ডল: অপ্রাণিবাচক-মেঘমন্ডল।
মডলী: প্রাণিবাচক-অধ্যাপকমন্ডলী, ভদ্রমন্ডলী।
মালা: অপ্রাণিবাচক-কথামালা, গাথামালা।
রাজি: অপ্রাণিবাচক-বনরাজি, তরুরাজি।
লোক: প্রাণিবাচক- জ্ঞানীলোক, মূর্খলোক, পন্ডিতলোক।
বর্গ: প্রাণিবাচক-ভদ্রবর্গ, নেতৃবর্গ, রাজন্যবর্গ।
বৃন্দ: প্রাণিবাচক-শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রবৃন্দ, ছাত্রীবৃন্দ।
সকল: সাধারণ অর্থে- লোকসকল, প্রাণিসকল।
সব: সাধারণ অর্থে-এইসব, সেইসব, টাকাসব।
সভা: প্রাণিবাচক-ছাত্রসভা, জনসভা।
সমুচয়: সাধারণ অর্থে-অর্থসমুচয়।
সমূহ: সাধারণ অর্থে-ক্ষেত্রসমূহ, পৃষ্ঠাসমূহ।
(আরবি শব্দ) প্রাণিবাচক-বন্ধুমহল, অন্দরমহল, রাজমহল।