প্র : বাংলাসাহিত্যের প্রথম নিদর্শন কী ?
উ : চর্যাপদ
প্র : চর্যাপদ আর কী কী নামে অভিহিত ?
উ : চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, চর্যাগীতিকোষ, চর্যাগীতিকা, চর্যাচয়, আশ্চযর্,
প্র : হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ পুথি কি নামে পেয়েছিলেন?
উ : চর্যাচর্যবিনিশ্চয়।
প্র : সেই পুথি কত সালে লিপিকৃত ?
উ : বারো শতকে।
প্র : পঞ্চকার পুথির লিপির সাথে চর্যাপদের পুথির তুলনা করেন কে ?
উ : তারাপদ মুখোপাধ্যায়।
প্র : বিনিশ্চয় শব্দের অর্থ কী ?
উ : বিনিশ্চয় শব্দের অর্থ টীকা।
প্র :চর্যাপদের টীকা রচনা করেন কে ?
উ : মুনি দত্ত।
প্র : চর্যা শব্দ অর্থ কী ?
উ : সমিল দুই চার চরণের পদকেই চর্যা বলে।
প্র : চর্যার তিব্বতি টীকাকার মুনি দত্তের নাম আাবিষ্কার করেন কে ?
উ : প্রবোধচন্দ্র বাগচী। তিনি তিব্বতি তরজমার বাংলা অনুবাদ করেন।
প্র : মুনি দত্তের টীকার নাম কী ?
উ : নির্মলগিরাটীকা।
প্র : চর্যাপদের পুথি কে কখন আবিষ্কার করেন?
উ : ১৯০৭ সনে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার থেকে চর্যাপদের পুথি আবিষ্কার করেন।
প্র : ‘হাজর বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষারয় বৌদ্ধ গান ও দোহা’র মধ্যে কী কী পুথি ছিল ? কে এটি সম্পাদনা করেন?
উ : এর মধ্যে চারটি পুথি ছিল। এগুলো হচ্ছে – চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরোহবজ্রের দোহা কোষ, কাহ্ন পাদের দোহাকোষ ও ডাকার্ণব।
প্র : কে চর্যাপদের ভাষা বাংলা নয় বলে মত প্রকাশ করেন ?
উ : ভাষাতত্ত্ববিদ বিজয়চন্দ্র মজুমদার প্রথম মত প্রকাশ করেন যে চর্যাপদের ভাষা বাংলা নয়।
প্র : কোন কোন পন্ডিত চর্যাপদের ভাষা বাংলা বলে প্রমাণ করেন ও যুক্তি দেখান ?
উ : সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও সুকুমার সেন।
প্র : চর্যাপদাবলির দাবীদার কারা?
উ : উড়িয়া, মৈথিলী ও অসমীয় ভাষার প-িতেরা চর্যাপদ তাদের ভাষায় রচিত বলে মনে করেন। কেউ কারো দাবী স্বীকার করে না। ফলে চর্যাপদ বাংলা ছাড়াও উড়িষ্যায় উড়িয়া,আসামে অসমীয় ও বিহারে হিন্দি রূপে গর্বের সম্পদ।
প্র : মূল চর্যাপদে পদের সংখ্যা কয়টি ?
উ: ৫১টি।
প্র : মুনিদত্তের টীকাকৃত চর্যাপদে কয়টি পদ ছিল ?
উ : প্রাপ্ত অন্ত্যেখ-িত পুথিতে পদের সংখ্যা সাড়ে ছেঢ়ল্লিশটি। মোট পদ ছিল পঞ্চাশটি।
প্র : চর্যার কবির সংখ্যা কত ?
উ : কবির বা পদকর্তার সংখ্যা ছিল তেইশজন।
প্র : পন্ডিতদের মতে চর্যাপদের রচনা কাল কখন?
উ : সপ্তম শতকরে মাঝামাঝি থেকে এগার শতকের মধ্যে চর্যাপদ রচিত। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে এর রচনা কাল ৬৫০ খ্রী : ; ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে এর রচনা কাল ৯৫০ খ্রী: থেকে ১২০০ খ্রী।
প্র : চৌরাশিসিদ্ধা কি ?
উ : চর্যাকারেরা সবাই সিদ্ধা বা সিদ্ধা পুরুষ। তারাও লোকশ্রুতির চৌরাশিজন বা চৌরাশিসিদ্ধার অর্šÍভ’ক্ত। এই শব্দটির রূপক বা সাংকেতিক ব্যবহার আছে। চৌদ্দ শতক থেকে ‘চৌরাশিসিদ্ধা বলতে চৌরাশিজন বৌদ্ধ সিদ্ধা বা নাথপন্থী মহাসিদ্ধারসন্ধান করা হয়। তিব্বতিসুত্র থেকে অ্যালবার্ট গ্রুএনবেডেল প্রথম এই সিদ্ধাদের নাম ও পরিচয় দিয়েিেছলেন।
ষোল শতকের কবি মীর সৈয়দ সুলতান তার জ্ঞানপ্রদীপ নামক সুফিযোগ গ্রন্থে বলেছেন, স্ব স্ব হাতের আঙুলে চৌরাশি আঙুল পরিমিত দেহ ও দেহজ মন নিয়ন্ত্রণে সিদ্ধ যে-সাধক, সেই চৌরাশি সিদ্ধা।
প্র : চর্যাপদ কখন কে আাবিষ্কার করেন ?
উ : ১০৯৭সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।
প্র : কোন জমিদারের অর্থসাহায্যে কখন হরপ্রাসদ শাস্ত্রী চর্যাপদ প্রকাশিত হয় ?
উ : লালগোলার জমিদার যোগেন্দ্রনারায়ন রাওয়ের অর্থসাহেয্যে ১৯১৬সালে চর্যাপাদ প্রকাশিত হয়।
প্র : চর্যাপদের সাথে আর কি কি প্রকাশিত হয়?
উ : চর্যাচর্যনিশ্চিয় এর সাথে সরোজব্রজের দোহাকোষ, কাহ্নপাদের দোহাকোষ ও ডাকার্নব এই চারটি পুথি একত্রে ছাপা হয়।
প্র : এই চারটি পুথি কি নামে ছাপা হয়েছিল ?
উ : হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধ গান ও দোহা নামে প্রকাশিত হয়।
প্র : সুকুমার সেন চর্যাপদের ভাষাকে কি নামে অভিহিত করেছেন ?
উ : সুসকুমার সেনের মতে চযাপদের ভাষা হরো প্রতœ-বাংলা-উড়িয়া-আসামি-মৈথিলি।
প্র : ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ -র মতে চর্যাপদের ভাষার নাম কী ?
উ : তাঁর মতে এর ভাষা হলো ‘বঙ্গ-কামরূপী’।
প্র : সন্ধ্যা বা সন্ধা ভাষা কী ?
উ : চর্যাপদের ভাষাকে সন্ধ্যা বা সন্ধা ভাষা বলা হয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন, সহজিয়া ধর্মের সকল বইই সন্ধ্যা ভাষায় লেখা। সন্ধ্যা ভাষার মানে আলো-আঁধারি ভাষা , কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না।
প্র : চর্যাপদের কোন কবি কয়টি পদ রচনা করেছেন ?
উ : তেইশ জন পদকর্তার মধ্যে কাহ্নের ১৩টি,ভুসুকের ৮টি. সরহের ৪টি, কুক্করির ৩টি এবং লুই,শান্তি ও সবরের ২ট করে এবং বাকি সবার ১টি করে পদ রয়েছে।
প্র : চর্যায় যে সব রাগের উল্লেখ রয়েছে তার মদ্যে কোন রাগেরসংখ্যা বেশি ?
উ : রাগ পটমঞ্জুরি। এই রাগে ১২ টি চর্যাপদে উল্লেখ আছে।
প্র : চর্যাপদ কোন ছন্দে রচিত ?
উ : চর্যার ছন্দকে সরাসরি কোন ভাগে ফেলা কষ্টকর। কেউ একে ষোলোমাত্রার পাদাকুলক, কেউ পয়ারি ত্রপদী বা অক্ষরবৃত্তের ছন্দে রচিত বলে মনে করেন।
প্র : চর্যাপদ গান ? নাকি কবিতা ?
উ : কবিতা। তবে এটি গীত হতে পারে এমনভাবে রচিত। এটিকে গান বললেও ভুল হবে না। কারণ এটি গান হিসেবে রচিত হয়েছিল।
প্র : চর্যাকাররা কোন ধর্মের ছিলেন ?
উ : বৌদ্ধ ধর্মের।
প্র : চর্যাপদের বাঙালি কবি কে ছিলেন ?
উ : সবর পা।
প্র : প্রাচীন বাংলার রাজা লক্ষণসেনের সভায় যে পঞ্চরতœ ছিলেন তাদের নাম কি কি?
উ : উমাপতি ধর, শরণ, ধোয়ী, গোবর্ধন আচার্য ও জয়দেব। এদের মধ্যে জয়দেব জয়দেব মধ্যমণি। জয়দেব লক্ষণসেনের সভাকবি হিসেবে গীতগোবিন্দ রচনা করেন (সংস্কৃত ভাষায়) যা সারা ভারতে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
প্র : ডাক ও খনার বচনের পরিচয় দাও ?
উ : ডাক ও খনার বচনকে প্রাচীন যুগের রচনা বলে অনেকে ধারণা করেন। তবে এসবের কোন লিখিত কোন নিদর্শন নেই। ডাক ও খনার বচন ছড়া জাতীয় রচনাকে লোকসাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডাক বা খনা নামে কেউ ছিল কিনা তা বলা যায় না। ড. দীনেশচন্দ্র সেন াক ও খনারবচন রচনার সময়কাল অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতক বলে মনে করেন।
প্র : প্রাপ্ত চর্যাপদের পদকর্তা কতজন ?
উ : ২৩ জন
প্র : চর্যাপদের প্রথম পদটির রচয়িতা কে ?
উ : লুইপা
প্র : চর্যাপদ কোন ছন্দে রচিত ?
উ : অক্ষরবৃত্ত
প্র : বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন পুথির নাম কি ?
উ : চর্যাপদ
প্র : চর্যাপদের আবিষ্কারক কে ?
উ : হরাপ্রসাদ শাস্ত্রী
প্র : বাংলাভাষার আদি নিদর্শন আবিষ্কার হয় কত সালে ?
উ : ১৯০৭ সালে
প্র : সান্ধ্য ভাষা কোন রচনায় পাওয়া যায় ?
উ : চর্যাপদ
প্র : চর্যাপদ কোন ধর্মাবলম্বীদের সাহিত্য ?
উ : সহজিয়া বৌদ্ধ
প্র : চর্যাপদের কোন কোন পদ খ-িত আকারে পাওয়া গেছে ?
উ : ২৪, ২৫, ৪৮ নং পদ।
প্র : চর্যাপদে কয়টি প্রবাদ আছে ?
উ : ছয়টি।
প্র চর্যাপদের ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা তাঁর সুনীতিকুমার কোন গ্রন্থে দেন ?
উ : Origin and Development of Bengali language (ODBL) নামক গ্রন্থে।
প্র : ‘সদুক্তি কর্ণামৃত’ কোন সময়ের গ্রন্থ ?
উ সেন আমলের।
প্র : হরপ্রসাদ শ্রাস্ত্রীর উপাধি কী ?
উ : মহামহোপাধ্যায়।
প্র : মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে চর্যাপদের প্রথম কবি কে ?
উ : তাঁর মতে শবরপা।
প্র : চর্যাপদের আনুমানিক বয়স কত?
উ : আনুমানিক ১০০০ বছর।