যার দ্বারা বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সংখ্যাবাচক ধারণা তৈরি হয় তাকে বচন বলে। বাংলা বচন দু’প্রকার যথা- ১. একবচন, ২. বহুবচন।
একবচন: যে শব্দ দ্বারা একক ধারণা জন্মে তা একবচন। যেমন— কলম, সে, আমি, ছেলে, মেয়ে।
বহুবচন: যে শব্দ দ্বারা একের অধিক ধারণা জন্মে তা-ই বহুবচন। কলমগুলো, তারা, আমরা, ছেলেরা, মেয়েরা।
সংস্কৃত, আরবি ও অন্যান্য ভাষায় দ্বিবচনের প্রচলন থাকলেও বাংলাতে দ্বিবচনের প্রয়োগ নেই। শব্দের শেষে নানান রকমের শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়। এই শব্দাংশ বা প্রত্যয় শব্দের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে যুক্ত হয়। প্রত্যয় ছাড়াও কতকগুলো সমষ্টিবাচক শব্দও যুক্ত হয়। প্রত্যয় ও সমষ্টিবাচক শব্দগুলো নিম্নরূপ:
প্রত্যয়: বা, এরা, দিগ, দিগের, দের, গুলি, গুলা।
সমষ্টিবাচক শব্দ: গণ, কুল, বৃন্দ, জন, আদি, আদিক, লোক, সকল, সব, সভা, বর্গ, রাশি, সমূহ, সমুচয়, নিচয়, মালা, আবলী ই্যাদি।
বাংলা ভাষায় কখনো কখনো বহুবচনের জন্য কোনও প্রত্যয় বা সমষ্টিবাচক শব্দ যুক্ত হয় না, একবচনের রূপের দ্বারাই বহুবচন বোঝানো হয়। সেক্ষেত্রে বাক্যের অর্থ ধরে একবচন বা বহুবচন বুঝতে হয়। যেমন— সাতজন মানুষ (সাতজন মানুষেরা নয়)। চারটে ছেলে (ছেলেরা নয়)।
বহুবচন বোঝায় এমন প্রত্যয়গুলোর প্রয়োগ ও উদাহরণ:
রা, এরা: সর্বনাম, দেবতা ও মানবের নামের সাথে যুক্ত হয়।
উদাহরণ: তোমরা, তাহারা, এরা, শিশুরা, লোকেরা, ফেরেস্তারা, দেবতারা, পাখিরা, পশুরা।
অপ্রাণিবাচক শব্দে ‘রা’ প্রত্যয় হয় না। হলে সে প্রয়োগ অশুদ্ধ। অপ্রাণিবাচক বস্তুতে প্রাণশক্তি বা চেতনাশক্তি আছে ধারণা করলে বা যুক্ত হতে পারে। যেমন— তারারা অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় চেয়ে আছে।
সাধারণ ব্যঞ্জনান্ত শব্দে ‘এরা’ এবং স্বরান্ত শব্দে রা যুক্ত হয়। এর অবশ্য ব্যতিক্রম আছে এবং ‘রা’, ‘এরা’ কেবল কর্তাকারকে ব্যবহৃত হয়।
দিগ, দিগের, দিগে, দিকে, দে, এদের, দের: এই প্রত্যয়গুলো কর্তা ছাড়া অন্য কারকে ব্যবহৃত হয়। বালকদিগকে (সাধু), বালকদের (চলিত), শিক্ষকদিগের (সাধু), শিক্ষকদের, ভদ্রলোকদের।
গুলা, গুলি: এই দুটি প্রত্যয় বহুবচনের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রাণিবাচক, অপ্রাণিবাচক উভয় প্রকার নামের সাথে যুক্ত হয়।
অনাদরে ‘গুলা’ (চলিত ভাষায় গুলো), আদরে ‘গুলি’। যেমন— গরুগুলি, ছাগলগুলি, বদমায়েশগুলো, পাহাড়গুলি ইত্যাদি। গুলান, গুলিন, গুলাক সাধু ভাষায় ও আঞ্চলিক ভাষায় প্রচলিত।
উচ্চশ্রেণীর ব্যক্তিগণের নামবাচক শব্দে ‘গুলা’ বা ‘গুলি’ ব্যবহৃত হয় না।
সমষ্টিবাচক শব্দ: বাংলার নামের সাথে সমষ্টিবাচক শব্দ সাধারণত সংস্কৃত হতে এসেছে এবং তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সাথে প্রযুক্ত হয়। প্রাকৃত শব্দের সাথে যুক্ত হয় না।