যতি বা বিরাম চিহ্ন

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত যতি চিহ্নের উদাহরণসহ উল্লেখ কর

ক. কমা (,)
কমা চিহ্ন সবচেয়ে কম বিরতি নির্দেশ করে। যেমন: আমি বাড়ি যাবো, আর থাকবো না। হতে পারে, এই সময় সে হয়তো বাড়িতে নেই। সকলেই কয়, অতি সুখময়, সুখের যৌবনকাল। ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪০৭।

খ. সেমিকোলন (;)
কমার চেয়ে একটু বেশি বিরতি দেবার জন্য সেমিকোলন ব্যবহার করা হয়। একটি বাক্যকে অন্য বাক্য পর্যন্ত প্রসারিত করার সময় মাঝখানে সাধারণত সেমিকোলন ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ নদীর দেশ; বেশির ভাগ নদীই উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত। প্রেসিডেন্ট আজ রাজশাহী আসবেন; দুপুরে সভাশেষে ঢাকায় ফিরে যাবেন।

গ. কোলন (:)
সেমিকোলনের মতই ব্যবহৃত হয়। তবে, দুটি বাক্যের মাঝে নয়। সাধারণত কোন বক্তব্যের শুরুতে এবং কোন বিষয়বস্তুর আলোচনার শুরুতে কোলন ব্যবহৃত হয়। তিনি এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন: …………. অথবা আলোচনার বিষয়বস্তুতে যেমন- অর্থনীতি:/ খেলাধুলা: ইত্যাদি।

কোলন ড্যাস (:-)
লেখার ভেতরে কোনো লেখকের উদ্ধৃতি ব্যবহারের জন্য এই বিরতি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন, রবীন্দ্রনাথের গানে গভীর জীবনবোধ প্রতিফলিত হয়:-
আমি চঞ্চল হে আমি সুদূরের পিয়াসী।

ড্যাস (-)
উদাহরণ প্রয়োগের সময় ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন, কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
হিন্দু না ওরা মুসলিম জিজ্ঞাসি কোন জন-?
কান্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার

হাইপেন (-)
সমাসবদ্ধ পদের মতো দুটি শব্দ পাশাপাশি লিখে পদ সংযোগ করার সময় হাইফেন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। হাইফেন দিয়ে দুটি শব্দকে একটি শব্দ বা পদে পরিণত করা হয়। যেমন, আইন-শৃঙ্খলা, অন্তর-কাঠামো ইত্যাদি।

দাঁড়ি বা পূর্ণ বিরতি (।)
শেষ হয়, সেখানে দাঁড়ি ব্যবহার করা হয়। যেমন, আসমানে কত তারা, কেউ তার হিসাব নিতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার প্রধান কবি।

জোড় দাঁড়ি বা দুই দাঁড়ি (।।)
দিনে ব্যবহৃত হত। সাধারণত পয়ার ছন্দের প্রথম স্তবকে দাঁড়ি এবং তার মিলসহকারে দ্বিতীয় স্তবকে জোঁড় দাঁড়ি বা দুই দাঁড়ি ব্যবহার করা হত। পুঁথিতে এই জোড় দাঁড়ি বেশি ব্যবহৃত হত। যেমন, আল্ল ার মকবুল শাহ গরীবুল্লাহ নাম।
বালিয়া হাফেজপুর যাহার মোকাম।।

প্রশ্ন চিহ্ন (?)
যদি প্রশ্নবোধক হয় তাহলে বাক্যের শেষে দাঁড়ি না বসে জিজ্ঞাসা চিহ্ন বা প্রশ্নচিহ্ন বসে।
উদাহরণ:
ক. তোমার নাম কি?
খ. তুমি কি সেখানে যাবে?
লক্ষণীয় বাক্যের মধ্যেও কখনো কখনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসতে পারে। কোন শব্দ নিয়ে লেখকের মনে সন্দেহ তৈরি হলে তিনি সেই শব্দের পরে প্রথম বন্ধনী দিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিতে পারেন।
ক. তাদের সাথে তোমার সম্পর্ক (?) আছে জানতাম না তো।
খ. তার সাথে তার স্ত্রী (?) এসেছিলেন নাকি?
গ. তার জন্ম তারিখ জানুয়ারির ১২ (?) তারিখ।

বিস্ময়চিহ্ন (!)
অবাক বা বিস্মিত হওয়া বোঝাতে বাক্যের শেষে বিস্ময়চিহ্ন বসে। তাছাড়া, বাক্যের মধ্যেও কোন শব্দের শেষে বিস্ময়চিহ্ন বসানো যেতে পারে।
ক. অদ্ভুদ ব্যাপার! আমার ম্যানিবাগ কোথায় গেল!
খ. রাস্তায় চিৎকার শোনা গেল-ডাকাত! ডাকাত!
গ. ছেলেটার উচ্চতা শ্রেফ তিন ফুট! কোন মেয়ে তাকে পছন্দ করবে?

ঊর্ধ্বকমা (’) বা লোপ চিহ্ন
শব্দের মধ্যে কোন অক্ষর লোপ পেলে সেই স্থানে ঊর্ধ্বকমা বসিয়ে বাদ দেয়া অক্ষরটিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আজকাল এর ব্যবহার প্রায় নেই বললে চলে। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে উর্ধ্বকমা না দিলে অর্থের বিপর্যয় ঘটে। আগেকার দিনে প্রচলিত কিছু শব্দে উর্ধ্বকমা কিভাবে ব্যবহৃত হত তার নমুনা দেয়া হল: উপরে (’পরে), লভিয়া (লভি’), রহিবি (র’বি), দেওয়া (দে’য়া), নেওয়া (নে’য়া), করিয়া (ক’রে), দুইজন (দু’জন) ইত্যাদি।

সাধারণত বাক্যের গঠন থেকেই বোঝা যায় কোন শব্দের কি অর্থ। বাক্যের অর্থ প্রবণতাই শব্দের অর্থ স্পষ্ট করে। তবে, অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে উর্ধ্বকমা না দিলে অর্থ বোঝা যায় না। যেমন:
ক. মা’র কাছে শুনেছি অনেক গল্প।
খ. কা’দের গাছে আম পাড়তে গেছিস?
গ. তার জন্ম ’৫২ জানুয়ারিতে।

বিকল্প চিহ্ন (/)
কোন শব্দের বিকল্পে অন্য আরো শব্দ ব্যবহৃত হতে পারলে সেক্ষেত্রে বিকল্প চিহ্ন দেয়া হয়। তবে, এর ব্যবহার ইদানিং কমে গেছে। গদ্য বা পদ্যে বিকল্প চিহ্ন সৌন্দর্য হানি করে বলে অনেকে এই চিহ্ন ব্যবহারের পক্ষপাতী নন। তবে, গদ্যের মধ্যে কবিতার উদ্ধৃতি থাকলে পংক্তির শেষ বোঝাতে বিকল্প চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ:
ক. আট/দশ/বারো যা পাস দে।
খ. অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে দিন:- আপনার আয় বছরে ২ লক্ষ/৩ লক্ষ/৫ লক্ষের নিচে।

একবিন্দু বা ডট (.)
একবিন্দু বা ডট চিহ্ন বর্তমানে সংক্ষেপণের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন:
মাস্টার অব আর্টস = এম. এ.
ব্যাচেলর অব আর্টস = বি. এ.
ডক্টরেট = ড.
ডাক্তার= ডা.

Exit mobile version