বাক্যের অংশ দুটি- ক) উদ্দেশ্য, খ) বিধেয়। বাক্যে যাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় অর্থাৎ বাক্যের কর্তাকেই উদ্দেশ্য বলা হয়। উদ্দেশ্য কখনো ঊহ্য থাকতে পারে। আবার উদ্দেশ্য অনেক পদ দ্বারা সম্পর্কিত হতে পারে। অর্থাৎ উদ্দেশ্য একটি পদেই সীমাবদ্ধ থাকবে এমন কোন কথা নেই। যেমন- লোকটি বই পড়ছে। আমার ভাই সোফায় বসে বই পড়ছে। এখানে ‘লোকটি’ ও ‘আমার ভাই সোফায় বসে’ উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয় তাই বিধেয়। অর্থাৎ বাক্যে কর্তা সম্পর্কে যা বলা হয়ে থাকে তাকে বিধেয় বলা হয়। ওপরের দুটি উদাহরণের ‘বই পড়ছে’ বিধেয়।
বাক্যের প্রকারভেদ
গঠন অনুসারে বাক্যকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়- (ক) বিবৃতিমূলক (খ) প্রশ্নবাচক (গ) অনুজ্ঞাবাচক (ঘ) ইচ্ছাবাচক (ঙ) বিস্ময়সূচক (চ) প্রার্থনাবাচক। নিম্নে উভয় শ্রেণীর বাক্যের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দেয়া হল:
গঠনমূলক বাক্য
সরল বাক্য : বাক্যের একটি মাত্র উদ্দেশ্য এবং অন্য কোন বাক্যের সাথে যে বাক্যের সম্পর্ক থাকে না তাকে সরল বাক্য বলে। এক্ষেত্রে প্রধান ক্রিয়া ** সাধারণত একটি থাকে।
উদাহরণ: ক. আমার বাড়ি রাজশাহী।
খ. আমার ছোট ভাই রহিম প্রতিদিন স্কুলে যায়।
গ. আমার ছোট ভাই রহিম প্রতিদিন সাইকেলে করে ১০ মাইল দূরে স্কুলে যায়।
লক্ষণীয় যে, বাক্য বড় হলেও সরল বাক্য হতে পারে। কর্তার উদ্দেশ্য ও প্রধান ক্রিয়া একাধিক না হলে, শর্তযুক্ত বাক্য না হলে, খন্ডবাক্য ও উপবাক্য না থাকলে বাক্য সরল হবে। সরল বাক্যের কর্তা সম্পর্কে তথ্য যোগ হতে পারে, স্থান কাল পাত্র সম্পর্কে তথ্য যোগ হতে পারে, তবে বাক্যের মূল উদ্দেশ্য ঠিক থাকবে। ওপরের ২নং ও ৩নং উদাহরণ লক্ষ করলে বোঝা যাবে কিভাবে সরল বাক্য বড় হতে পারে। বাক্যটির মূল অংশ রহিম স্কুলে যায়। পরবর্তীতে রহিমকে সম্পর্কিত করা হয়েছে, তার স্কুলে যাওয়া সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য দেয়া হয়েছে। তবু, ‘রহিম স্কুলে যায়’ বাক্যের মৌলিক গঠনের কোন পরিবর্তন হয়নি।
জটিল বাক্য (Complex) : একটি প্রধান বাক্যের সাথে অন্য একটি অপ্রধান বা খন্ডবাক্য মিলে জটিল বাক্য তৈরি হয়। জটিল বাক্য সাধারণত শর্তসাপেক্ষে তৈরি হয় অর্থাৎ একটি অংশের সাথে অন্য অংশটি শর্তসাপেক্ষে তৈরি হয়। ইংরেজিতে যেমন বলা হয়, প্রধান Clause এর সাথে Subordinate Clause মিলে জটিল বাক্য তৈরি হয়। এখানে শর্ত বা সম্পর্ক তৈরি করতে সাপেক্ষ সর্বনাম পদ থাকে।
উদাহরণ:
ক. সে এলেই তবে আমি যাবো (শর্তসাপেক্ষ পদ সে, তবে)।
খ. যদি লেখাপড়া কর তাহলে পরীক্ষায় পাস করবে (শর্তসাপেক্ষ পদ যদি, তাহলে)।
গ.যখন ঘণ্টা পড়বে তখন, স্কুলে ছুটি হবে (শর্তসাপেক্ষ পদ যখন, তখন)।
উল্লেখ্য যে, শর্তসাপেক্ষ সর্বনাম পদ ঊহ্য থাকতে পারে, কর্তাও ঊহ্য থাকতে পারে।
১নং উদাহরণে, আমি যাব-প্রধান বাক্য।
সে এলেই-অপ্রধান খন্ড বাক্য।
২নং উদাহরণে, (তুমি) পরীক্ষায় পাস করবে-প্রধান বাক্য।
যদি লেখাপড়া কর-অপ্রধান খন্ডবাক্য।
৩নং উদাহরণে, স্কুল ছুটি হবে-প্রধান বাক্য।
যখন ঘণ্টা পড়বে-অপ্রধান খন্ড বাক্য।
আরো উদাহরণ:
ক) আপনি যদি চান তাহলে আমি রাতে আসতে পারি।
খ) যত বেশি বই বিক্রি হবে বইয়ের দাম তত কমবে।
গ) যে লোকটি কাল এসেছিল সে আমার ছোট ভাই।
ঘ) যদি কাল হরতাল হয় তাহলে বাস চলবে না।
লক্ষণীয়: জটিল বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়াতে রূপান্তরিত করলে জটিল বাক্যটি সরল বাক্যে পরিণত হয়। ওপরের উদাহরণগুলো পরিবর্তন করা হল:
ক) আপনি চাইলে আমি রাতে আসতে পারি। সরল বাক্য
খ) বেশি বিক্রি হলেই বইয়ের দাম কমবে। সরল বাক্য
গ) গতকাল আসা লোকটি আমার ছোট ভাই। সরল বাক্য
ঘ) হরতাল হলে বাস চলবে না। সরল বাক্য
যৌগিক বাক্য : এক বা একাধিক সরল বাক্য, জটিল বাক্য মিলে যৌগিক বাক্য তৈরি হয়। এক্ষেত্রে বাক্যগুলো সংযোজক অব্যয়দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগিক বাক্য গঠিত হয়। যৌগিক বাক্য বেশ দীর্ঘ হয়। ও, এবং, তবু, কিন্তু, তাহলে, তবে, তবু, নইলে, আর ইত্যাদি অব্যয় পদ বাক্যকে যোগ করতে সাহায্য করে। জটিল বাক্যের মতো এখানে শর্তযুক্ত বাক্য গঠিত হয় না। বাক্যের অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র বাক্যগুলো স্বাধীন বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাদের মূল বাক্য থেকে বিচ্ছিন্ন করলেও তারা বাক্য হিসেবে মূল্য পায়। জটিল বাক্যের ক্ষেত্রে তা হয় না।
যৌগিক বাক্য গঠনের উপাদান হল- সরল বাক্য, জটিল বাক্য ও সংযোজক অব্যয়। অবশ্য বাক্যে এদের স্থান আগে পরে হতে পারে এবং সরল বাক্য ও জটিল বাক্যের সংখ্যা বাড়তে পারে।
উদাহরণ:
ক) তাকে বলা হয়েছিল তবে সে আসেনি।
খ) আমার তার কথা মনে নেই কিন্তু তার ঠিকই মনে আছে।
গ) রাতে শিশির পড়েছিল এবং প্রচণ্ড শীত শুরু হল সকাল থেকে।
ঘ) আকাশে অজস্র তারার মেলা, মৃদু বাতাস আর নীরবতা মিলে তৈরি হয়েছে হিরন্ময় এক পরিবেশ।
ঙ) তাকে দেখে মনে হল কোন গাঁয়ের এক গোবেচারা, কথাবার্তা চাল-চলনে কোন আধুনিকতার ছোঁয়া নেই, অথচ সে বি.এ. পাস করেছে কৃতিত্বের সাথে।
চ) সে এল, দেখল, এবং জয় করল।
লক্ষণীয় যে, জটিল বাক্যে সংযোজক অব্যয় অনেক সময় ঊহ্য থাকে। সে স্থানে কমা (,) ব্যবহার করে সংযোজক অব্যয়ের কাজ চালানো হয়।
তথ্যসূত্র: পুরাতন বইয়ের দোকান/লাইব্রেরি হতে বিভিন্ন লেখকের বাংলা ব্যাকরণ বই সংগ্রহ করে তা এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।