Friday, October 4, 2024

বাক্যের অশুদ্ধতা

বাক্যে অশুদ্ধ শব্দের প্রয়োগে বাক্য অশুদ্ধ হয়ে পড়ে। এই অশুদ্ধতা বহু প্রকারের হয়ে থাকে। নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হল:

যথার্থ শব্দ ব্যবহার না করায় অশুদ্ধতা: শব্দের সঠিক অর্থ না জেনে বাক্যে শব্দ ব্যবহার করলে বাক্য ভুল হয়ে যায়।
অশুদ্ধ : চন্দ্র উদয় হলো।
শুদ্ধ : চন্দ্র উদিত হলো।
অশুদ্ধ : আমি সাক্ষী দিয়েছি।
শুদ্ধ : আমি সাক্ষ্য দিয়েছি।
অশুদ্ধ : আসামির অনুপস্থিতে বিচার হচ্ছে।
শুদ্ধ : আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার হচ্ছে।
অশুদ্ধ : বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশ।
শুদ্ধ : বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।
অশুদ্ধ : ছেলেটি ভয়ানক মেধাবী।
শুদ্ধ : ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী।
অশুদ্ধ : আপনি স্বস্ত্রীক আমন্ত্রিত।
শুদ্ধ : আপনি সস্ত্রীক আমন্ত্রিত।
অশুদ্ধ : তিনি সন্তোষ হলেন।
শুদ্ধ : তিনি সন্তুষ্ট হলেন।
অশুদ্ধ : এটা অতি লজ্জাস্কর বিষয়।
শুদ্ধ : এটা অতি লজ্জাকর বিষয়।
অশুদ্ধ : তিনি মৌন হয়ে রহিলেন।
শুদ্ধ : তিনি মৌনী হইয়া রহিলেন।
অশুদ্ধ : আমার টাকার আবশ্যক নাই।
শুদ্ধ : আমার টাকার আবশ্যকতা নাই।
অশুদ্ধ : নিশ্চয় সংবাদ পেয়েছ কি?
শুদ্ধ : নিশ্চিত সংবাদ পেয়েছ কি?

বিশেষ ও বিশেষণজনিত ভুল
অশুদ্ধ : সর্বদা তোমার উপস্থিত কাক্সিক্ষত (বিশেষণ)
শুদ্ধ : সর্বদা তোমার উপস্থিতি কাক্সিক্ষত (বিশেষ্য)
অশুদ্ধ : তিনি উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেন (বিশেষণ)
শুদ্ধ : তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।
অশুদ্ধ : অনাবশ্যকীয় বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে না। (বিশেষ্য ভাবা হয়েছে)
শুদ্ধ : অনাবশ্যক বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে না। (বিশেষণ)
অশুদ্ধ : তোমার সাথে গোপন আলাপ আছে।
শুদ্ধ : তোমার সাথে গোপনীয় আলাপ আছে।

বাহুল্যজনিত অশুদ্ধতা
অনেক সময় একই অর্থ বহনকারী দুটি শব্দ একই বাক্যে ব্যবহার করা হয়। বাক্যে একই অর্থের দুটি শব্দের দৃশ্যত কোন প্রয়োজন নেই। অনেক অসচেতনতা ও শিথিল প্রয়োগের কারণে অনেকের লেখায় এই বাহুল্য দোষ লক্ষ করা যায়। এটা পরিহার করা কর্তব্য।
অশুদ্ধ : বৃক্ষটি সমূলসহ উৎপাটন করা হল।
শুদ্ধ : বৃক্ষটি সমূলে উৎপাটন করা হল।
অশুদ্ধ : শুধুমাত্র মুখের জোরে তুমি তাকে বাধা দিতে পারবে না।
শুদ্ধ : শুধু মুখের জোরে তুমি তাকে বাধা দিতে পারবে না।
অশুদ্ধ : কেবলমাত্র তাকেই আমি চিনি।
শুদ্ধ : কেবল তাকেই আমি চিনি।
অশুদ্ধ : বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ কোটি।
শুদ্ধ : বাংলাভাষীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ কোটি।

বাচ্যজনিত ভুল প্রয়োগ
অশুদ্ধ : পিতা তোমার প্রতি ক্রোধ হয়েছেন।
শুদ্ধ : পিতা তোমার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন।
অশুদ্ধ : আমরা প্রতিপালন হইতেছি।
শুদ্ধ : আমরা প্রতিপালিত হইতেছি।

প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহারজনিত ভুল
প্রবাদ-প্রবচনের শব্দ পরিবর্তন করা সঙ্গত নয়। মানব সমাজের দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে বিকৃত করা অনৈতিক।
অশুদ্ধ : হাবিব পরীক্ষা এলে চোখে হলুদ ফুল দেখে।
শুদ্ধ : হাবিব পরীক্ষা এলে চোখে সর্ষে ফুল দেখে।
অশুদ্ধ : তোমার মতো মাখনের পুতুল দিয়ে এ কাজ হবে না।
শুদ্ধ : তোমার মতো ননীর পুতুল দিয়ে এ কাজ হবে না।
অশুদ্ধ : তার মতো দাগী আসামীকে দেখাও জেলের ভয়, মাছের আবার সর্দি।
শুদ্ধ : তার মতো দাবী আসামীকে দেখাও জেলের ভয়, ব্যাঙের আবার সর্দি।

বিভক্তির প্রয়োগজনিত ভুল
অশুদ্ধ : আমি ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়, তবে ফাইনাল পরীক্ষায় খারাপ করি।
শুদ্ধ : আমি ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাই, তবে ফাইনাল পরীক্ষায় খারাপ করি।
অশুদ্ধ : প্রিন্সিপাল গোলোযোগ করার জন্য পাঁচজন ছাত্র বহিষ্কার করেছেন।
শুদ্ধ : প্রিন্সিপাল গোলোযোগ করার জন্য পাঁচজন ছাত্রকে বহিষ্কার করেছেন।
অশুদ্ধ : আমার দেখে তোমার কি মনে হয়?
শুদ্ধ : আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয়।

বচনজনিত ভুল
জটিল বাক্যে বা যৌগিক বাক্যে কর্তা অনুসারে পরবর্তী পর্যায়ে বচন প্রয়োগ করতে হয়। অন্যথায় বাক্য শুদ্ধ হয় না।
অশুদ্ধ: ক্লাসের ছাত্ররা বললো, সে বনভোজনে যাবে।
শুদ্ধ: ক্লাসের ছাত্ররা বললো, তারা বনভোজনে যাবে।
অশুদ্ধ: রনজিত অথবা সাব্বির নিজেরা গোল দিয়েছে।
শুদ্ধ: রনজিত অথবা সাব্বির নিজে গোলটি দিয়েছে।

সাধু ও চলিতের মিশ্রণজনিত ভুল
সাধু ও চলিতের মিশ্রণ বাক্যকে অশুদ্ধ করে। সাধারণত ও তৎসম শব্দের সমন্বয় করে বাক্য গঠন করা উচিত।
অশুদ্ধ: তিনি আমাকে দেখে বিস্মিত হইলেন।
শুদ্ধ: তিনি আমাকে দেখে বিস্মিত হলেন।
অথবা তিনি আমাকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন।
অশুদ্ধ: সারাদিন সে খেলা করে ঘুরিয়া বেড়ায়।
শুদ্ধ: সারাদিন সে খেলা করে ঘুরে বেড়ায়।
অশুদ্ধ: সে বললো, এইসব কি হইতেছে?
শুদ্ধ: সে বললো এসব কি হচ্ছে?

Related Articles

Latest Articles