প্র : বিহারীলাল চক্রবর্তী কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : নিমতলা, কলকাতা।
প্র : তিনি কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেন?
উ : ২৫শে মে, ১৮৩৫।
প্র : তিনি মূলত কী ছিলেন?
উ : কবি।
প্র : তিনি কী কী মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন?
উ : পূর্ণিমা (১৮৫৯), সাহিত্য সংক্রান্তি (১৮৬৩), অবোধ বন্ধু (১২৭৫)।
প্র : তিনি বাংলা সাহিত্যেল কীসের স্রষ্টা?
উ : আধুনিক গীতিকবিতার।
প্র : বিহারীলাল চক্রবর্তী রচিত কবিতায় প্রথম বিশুদ্ধভাবে কী প্রকাশিত হয়?
উ : কবির ব্যক্তিগত অনুভূতি ও গীতোচ্ছ্বাস।
প্র : তিনি গীতিকবিতার ক্ষেত্রে কী হিসেবে খ্যাত?
উ : রবীন্দ্রনাথের মুরু হিসেবে।
প্র : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বাংলা গীতিকবিতার ধারার কী বলে আখ্যা দিয়েছেন?
উ : ভোরের পাখি।
প্র : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বাংলা গীতিকবিতার ধারার ভোরের পাখি বলা কারণ কী?
উ : বিহারীলালই প্রথম বাংলায় ব্যক্তির আত্মলীনতা, ব্যক্তিগত ানুভূতি ও গীতোচ্ছ্বাস সহযোগে কবিতা রচনা করে বাংলা কবিতাকে নতুন এক প্রেরণা দান করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রথম। তাই তাঁকে ‘ভোরের পাখি’ বলা হয়েছে।
প্র : তাঁর প্রকামিত কাব্যগ্রন্থগুরোর নাম কী?
উ : স্বপ্নদর্শন (১৮৫৮), সঙ্গীত শতক (১৮৬২), বঙ্গসুন্দরী (১৮৭০), নিসর্গ সন্দর্শন (১৮৭০), বন্ধু বিয়োগ (১৮৭০), প্রেম প্রবাহিণী (১৮৭০) ও সারদা মঙ্গল (১৮৭৯)।
প্র : ‘বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যগ্রন্থের পরিচায় দাও।
উ : বিহারীলালের প্রতশ সার্থক গীতিকবিতার গ্রন্থ ‘বঙ্গসুন্দরী’ (১৮৭০)। এ কাব্যে কবি বলেছেন : ‘সর্বদাই হুহু করে মন/বিশ্ব যেন মরুর মতন/চারিদিকে ঝালাপালা/উঃ কি জ্বলন্ত জ্বালা / অগ্নিকুণেড পতঙ্গ পতন।’ রবীন্দ্রনাথ এ-প্রসঙ্গে বলেছেন : ‘আধুনিক বঙ্গসাহিত্যে এই প্রথম বোধ হয় কবির নিজের কথা প্রকাশ পাইয়াছে।’ গ্রন্থটির প্রথম সর্গ উপহার, দ্বিতীয সর্গ নারীবন্দনা, তৃতীয় সর্গ সুরবালা, চতুর্থ সর্গ চিরপরাধীনা, পঞ্চম সর্গ করুণাসুন্দরী, ষষ্ঠ সর্গ বিষাদিনী, সপ্তম সর্গ প্রিয়সখী, অষ্টম সর্গ বিরহিণ,ি নবম সর্গ প্রিয়তমা ও দশম সর্গ অভাগিনী নামকরণ করা হয়েছে।
প্র : ‘সারদামঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কাব্রগ্রন্থ ‘সারদামঙ্গল’ ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত। এটি পাঁচ সর্গে ত্রিপদী দীর্ঘ স্তবকময় লালিত্যপূর্ণ ভাষায় রচিত। কাব্যের প্রথম সর্গে কবির মনোজগতে এক কাব্যলক্ষ্মীর আবির্ভাব, দ্বিতীয সর্গে হারানো আনন্দ লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে কবির মানসভ্রমণ, তৃতীয় সর্গে কবিচিত্তের দ্বন্দ্ব, চতুর্থ সর্গে হিমালয়ের উদার প্রশান্তির মধ্যে কবিচিত্তের আশ্বাস লাভ, পঞ্চম সর্গে হিমালয়ের পুণ্যভূমিতে কবির আনন্দ উপলব্ধির চিত্র পাওয়া যায্ ‘সারদামঙ্গল’ কাব্র সম্পূর্ণরূপে জীবনরহিত, বিশেস সৌন্দর্যধ্যান। শেলির মতো বিহারীলাল তাঁর প্রিয়তমার মধ্যে সারদাকে অম্বেষণ করেছেন এবং দীর্ঘ বিহরের পর হিমাদ্রিশিখরে ভাব-সম্মিলনের চিত্র অংকন করে কবি কাব্যের পরিসমাপ্তি টেনেছেন।
প্র : ‘সাধের আসন’ কাব্রগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : আসন’কে (১৮৮৯) ‘সারদামঙ্গল’ কাব্রের পরিশিষ্ট বলা যায়। কোন এক সম্ভ্রান্ত বিবাহিত নারী কবির ‘সারদামাঙ্গল’ কাব্য পাঠ করে নিজ হাতে একটি আসন বুনে কবিকে উপহার দিয়েছেন। সেখাে ওই নারী কবিকে প্রশ্ন করেছেন, তুমি কাকে ধ্যান করে? এর উত্তর স্বরূপ বিহারীলাল ‘সাধের আসন’ লিখেছেন। শুরুই করেছেন এভাবে : ‘ধেয়াই কাহারে দেবী নিজে আমি জানি নে/ কবিগুরু বাল্মীকির ধ্যান-ধনে চিনিনে।’ এ কাব্যের সূচনাতে কবির রোম্যান্টিক মনোবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে কিন্তু কাব্রের শেষে তা মিস্টিসিজমে রূপান্তরিত। উপসংহার ছাড়া ‘সাধের আসন’ কাব্য দশ সর্গ বিশিষ্ট। এর প্রথম সর্গ মাধুরী, দ্বিতীয় সর্গ গোধূলি ও নিশীতে, তৃতীয় সর্গ প্রভাত ও যোগ্রেন্দ্রবালা, চতুর্থ সর্গ নন্দনকানন, পঞ্চম সর্গ অমরাবর্তীর প্রবেশ পথ, ষষ্ঠ সর্গ তুমি, সপ্তম সর্গ মায়া, অষ্টম সর্গ শশিকলা, নবম সর্গ আসনদাত্রী, দশম সর্গ পতিব্রতা নামকরণ করা হয়েছে। অনেকের মতে, এই কাব্যে কবি তাঁর মানসলক্ষ্মীর সন্ধান পেয়েচেন এবং এটাই তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য।
প্র : সর্বদা হুহু করে মন/বিশ্ব যেন মরুর মতনÑ কোন কবির লেখা?
উ : বিহারীলালের।
প্র : বিহারীলাল চক্রবর্তীর চরনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
উ : সৌন্দর্যপিয়াসী প্রকৃতি প্রেমিক কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতায় সমাজ সমকাল ও সমকালীন সমস্যাবলি ততোটা প্রাধান্য পায় নি। কিনউত কবিতার চরণে ছন্দে ঢেউ তুলেছে নূপুর-নিক্বণ। মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকৃতির রস পান করেছেন যেভাবে, সেই-ুগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে তার কবিতায়। নগরবাসের অভিজ্ঞতা কটিন আবরণে আচ্ছন্ন করতে পারে নি তাঁর সলজ্জ সরস মানসভূমিকে।
প্র : তাঁর মৃত্যুতারিখ কত?
উ : ২৪শে মে, ১৮৯৪; কলকাতা।