প্র : বুদ্ধদেব বসুর জন্মসাল কত?
উ : ৩০শে নভেম্বর, ১৯০৮।
প্র : তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : কুমিল্লা।
প্র : রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে কাকে সব্যসাচী লেখক বলা হয়।
উ : বুদ্ধদেব বুসকে।
প্র : তিনি মূলত কী কী ছিলেন ?
উ : কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক।
প্র : তিনি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন?
উ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইংরেজিতে।
প্র : জগন্নাত হলের ছাত্রাবস্থায় তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যা আজও বের হয়। তার নাম কী?
উ : বাসন্তিকা।
প্র : তাঁর সম্পাদিত পত্রিকাগুলো রনাম কী?
উ : প্রগতি (১৯২৭-২৯) ও কবিতা (১৩৪২-৪৭)।
প্র : হুমায়ুন কবিরের সাথে তাঁর সম্পাদিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা কোনটি?
উ : চতুরঙ্গ।
প্র : তাঁর রচিত কবিতাগ্রন্থের নাম কী?
উ : মর্মবাণী (১৯২৫), বন্দীর বন্দনা (১৯৩০), কঙ্কাবতী (১৯৩৭), দময়ন্তী (১৯৪৩), যে আঁধার আলোর অধিক (১৯৫৮), মরচেপড়া পেরেকের গান (১৯৬৬), একদিন চিরদিন (১৯৭১), স্বাগত বিদায় (১৯৭১) ইত্যাদি।
প্র : ‘কঙ্কাবতী’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ‘কঙ্কাবতী’ (১৯৩৭) বুদ্ধদেব বসুর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যের কবিতাগুলির কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যের কবিতাগুলির রচনাকাল ১৯২৯-৩৪ এবং প্রধান বিষয় প্রেম। সংগীতাময় ভাষা এবং উচ্চারণের সংক্ষেপের জন্য কাব্যগ্রন্থটি সমকালে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
প্র : ‘দময়ন্তী’ কাব্যগ্রন্থের রিচয় দাও।
উ : ‘দয়মন্তী’ (১৯৪৩) কাব্যগ্রন্থে সঙকলিত কবিতাগুলি ১৯৩৫-৪২ সালের মধ্যে রচিত হয়। এই কাব্রের মধ্যে বুদ্ধদেবের কবিতায় একটি পালাবদল লক্ষ্য করা যায়। দীপ্তি ত্রিপাঠীর মতে, এ কাব্যে বাৎসল্য ও শৃঙ্গার রসের যৌক্তিক মিলন ঘটেছে।
প্র : ‘কবিতা’ পত্রিকার পরিচয় দাও।
উ : ‘কবিতা’ (১৯৩৫), বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত পত্রিকা। এ পত্রিকা শুধু কবিতা এবং কবিতা বিষয়ক আলোচনার জন্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকা থেকে হরিন্ডন্দ্র মিত্র একটি কবিতা পত্রিকার সূত্রপাত করেন কিন্তু তা অল্প সময়ের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়। তনি দশক ধরে ‘কবিতা’ পত্রিকা বাংলা কবিতার গতিপ্রকৃতির পরিচয় যেমন ধরে রেখেছে, তেমনই গড়ে তুলতে চেয়েছে বিশেষ রুচি ও আদর্শ। প্রম কয়েক বছর এর সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র ও সমর সেন। বাংলাদেশের সমস্ত প্রধান কবি ‘কবিতা’র সঙ্গে কোনোনা কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন। ‘কবিতা’র শততম সংখ্যা ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬১-তে ‘কবিতা’ প্রত্রকিার প্রকাশ বন্ধ হয়।
প্র : তাঁর রচিত উপন্যাসগুলোর নাম কী?
উ : সাড়া (১৯৩০), সানন্দা (১৯৩৩), লালমেঘ (১৯৩৪), পরিক্রমা (১৯৩৮), কালো হাওয়া (১৯৪২), তিথিডোর (১৯৪৯), নির্জন স্বাক্ষর (১৯৫১), মৌলিনাথ (১৯৫২), নীলাঞ্জনের খাতা (১৯৬০), রাত ভরে বৃষ্টি (১৯৬৭) ইত্যাদি।
প্র : ‘তিথিডোর’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : ‘তিথিডোর’ (১৯৪৮) উপন্যাস প্রথম শ্রাবণ, করুণ রঙিন পথ, যবনিকা কম্পমান এই তিনখন্ডে বিভক্ত বাঙালি মধ্যবিত্ত শিল্পিত স্বভাব নয়-নারীর জীবনযাপনের মনোরম ও মধুর কাহিনি এ উপন্যাসে বর্ণিত। কাহিনির মূল উপজীব্য প্রেম ও যৌবনের বন্দনা। এই কাহিনির গীতল ভাষা ও কাব্যময়তা এবং এর শেষাংশে প্রযুক্ত ‘চৈতন্যপ্রবাহ’-ধর্মী বর্ণনাভঙ্গি দেখা যায়।
প্র : ‘একদা তুমি প্রিয়ে’ উপন্রাস সম্পর্কে লেখ।
উ : পলাশ ও রেবার মধ্যে যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তারই স্মৃতি ধরে উভয়ের মনে এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। রেবা নতুনভাবে প্রেমের অভিষেক করতে চায় কিন্তু পলাশ বুঝতে পারে তা সম্ভব নয়। এরকম একটি কাহিনি নিয়ে বুদ্ধদেব বসুর রচিত ‘একদা তুমি প্রিয়ে’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ সালে।
প্র : বুদ্ধদেব বসুর কবিপ্রতিভা সম্পর্কে কী বলা যায়?
উ : বুদ্ধদেব বসুর কবিতাগুলির বাচনভঙ্গির বক্রতা এবং ভাষাগত দুর্বোধ্যতা নেই। রোমান্টিকতার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর বেশি বয়সের রচনাগুলিতে। বুদ্ধদেবের রচনাতেই সর্বপ্রথম কাব্যরীতিতে কথ্যরীতির সংমিশ্রণ দেকা যায়। পৌরাণিক কাহিনি প্রসঙ্গ বা চিত্রকলা নির্মাণেও কবি যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। দ্রোপদীর শাড়ি দময়ন্তী, কঙ্কাবতী শীতের প্রার্থনা প্রভৃতি কাব্যে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ সকল কারণে সমকালীন কবিদের মধ্যে বুদ্ধদেবের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।
প্র : বুদ্ধদেব বসুকে নাগরিক কবি বলা যেতে পারে কেন?
উ : বুদ্ধদেবের কাব্যে সমাজচেতনা বিশেষভাবে প্রকাশ না পেলেও বাস্ত ববাদিতা ও নাগরিক চেতনা প্রকাশে সর্বগ্রহণ্য। এ জন্যই তাঁকে নাগরিক কবি বলে অভিহিত করা যেতে পারে। তাঁর কবিতায় নগর উঠে এসেছে মানুষের অভিজ্ঞতার আলোকে। আগে যে অভিজ্ঞতা মানুষ প্রকাশ করে নি বুদ্ধদেব তা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে রাতের নগর এবং এর বাস্তবতা তুলে ধরতে বুদ্ধদেবই আগ্রহী করেন পরবর্তীকারের কবিদের।
প্র : তাঁর রচিত গল্প গ্রন্থগুলোর নাম কী?
উ : অভিনয়, অভিনয় নয় (১৯৩০), রেখাচ্রিত (১৯৩১), হাওয়া বদল (১৯৪৩) ইত্যাদি।
প্র : বুদ্ধদেব বসু রচিত প্রবনধ গ্রন্থগুলোর নাম কী?
উ : হঠাৎ আরো ঝলকানি (১৯৩৫), কারের পুতুল (১৯৪৬), সাহিত্যচর্চা (১৯৬১), রবীন্দ্রনাথ : কথাসাহিত্য (১৯৫৫) ইত্যাদি।
প্র : তাঁর রচিত নাটকগুলোর নাম কী?
উ : মায়ামালঞ্চ (১৯৪৪), তপস্বী ও তরঙ্গিণী (১৯৬৬), কলকাতারা ইলেক্টা ও সত্যসন্ধ (১৯৬৮)।
প্র : তাঁর রচিত স্মৃতিকথাগুলোর নাম কী?
উ : আমার ছেলেবেলা (১৯৩৭), আমার যৌবন (১৯৭৬)।
প্র : তাঁর রচিত অনুবাদ কাব্যগুলো কী কী?
উ : কারিদাসের মেঘদূত, বোদলেয়ার; তার কবিতা, হেল্ডালিনের কবিতা, রাইনের মারিয়া রিলকের কবিতা।
প্র : তিনি তাঁর রচনার জন্যে কী কী পুরস্কারে ভূষিত হন?
উ : সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার, পদ্মভূষণ উপাধি ও রবীন্দ্র পুরস্কার।
প্র : তিনি কত তারিখে মৃত্যুবরণ করেন?
উ : ১৮ই মার্চ, ১৯৭৪।