Wednesday, December 4, 2024

মনীর চৌধুরী

প্র : মনীর চৌধুরীর জন্ম সাল কত?
উ : ২৭শে নভেম্বর, ১৯২৫।
প্র : তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? পৈতৃক নিবাস কোথায়?
উ : মানিকগঞ্জ, ঢাকা; পৈতৃক নিবাস নোয়াখালি জেলায়।
প্র : তিনি মূলত কী ছিলেন?
উ : শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সমালোচক ও বাগ্মী।
প্র : ভাষা আন্দোলনের উপর রচিত তাঁর বিখ্যাত নাটকের নাম কী?
উ : ‘কবর’ (প্রকাশ : ১৯৬৬)।
প্র : ‘কবর’ কবে, কোথায় রচিত ও অভিনীত?
উ : ১৯৫৩ সালে ঢাকা জেলে রচিত ও রাজবন্দিদের দ্বারা অভিনীত।
প্র : কার অনুরোধে তিনি এই নাটক লেখেন?
উ : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক রণেশ দাশগুপ্তর।
প্র : তাঁর উদ্ভাবিত বাংলা টাইপ রাইটিং-এর নাম কী?
উ : মুনীর অপটিমা।
প্র : তাঁর রচিত অন্যান্য প্রধান নাটকের নাম কী?
উ : রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২), চিঠি (১৯৬৬), কবর (১৯৬৬), দন্ডকারণ্য (১৯৬৬), পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য (১৯৬৯)।
প্র : রক্তাক্ত প্রান্তরের কাহিনি কোনগ্রন্থ থেকে নেয়া?
উ : কায়কোবাদের ‘মহাশ্মশান’।
প্র : তাঁর রচিত অনুবাদ নাটকগুলোর নাম কী?
উ : কেউ কিছু বলতে পারে না (১৯৬৭), রূপার কৌটা (১৯৬৯), মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০)।
প্র : তাঁর রচিত প্রবন্ধগ্রন্থগুলোর নাম কী?
উ : মীর মানস (১৯৬৫), তুলনামূলক সমালোচনা (১৯৬৯), বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০)।
প্র : ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’-এর পরিচয় দাও।
উ : ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ (১৯৬২) মুনীর চৌধুরীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌলিক নাটক। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের (১৭৬১) ঘটনা অবলম্বনে তিন অঙ্ক বিশিষ্ট এই নাটকটি রচিত। অবশ্য ইতিহাস থেকে তিনি কাহিনি গ্রহণ করেন নি, গ্রহণকরেছেন কায়কোবাদের ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৫) গ্রন্থ তেকে। ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ ঐতিহাসিক নাটক নয়, ইতিহাস-আশ্রিত নাটক। এ নাটকে অনেক অনৈতিহাসিক চরিত্রের সমাবেশ আছে। আতা খাঁ, হিরণবালা, অমর চরিত্র ঐতিহাসিক নয়। নাটকে আছে ;প্রশিক্ষিত মুসলিম যোদ্ধা ইব্রাহিম কার্দি মুসলিম শিবিরে চাকরি না পেয়ে মারাঠাদের কর্তৃক সমাদৃত হয় এব ংচাকরি পায়। যুদ্ধ শুরু হলে ইব্রাহিম কার্দির স্ত্রী জোহরা মন্নুবেগ ছদ্মনাম ধারণ করে এসে স্বামীকে মুসলিম শিবিরে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করে। বিশ্বাসঘাতকতা হবে বিবেচনা করে ইব্রাহিম কার্দি স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেয় এবং জীবন দিয়ে মারাঠাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে জোহরা ধর্মের জন্য স্বামীসঙ্গ ত্যাগ করে, কিন্তু হিরণবালা মুসলিম প্রেমিককেই গ্রহণ করে। নাটকের নায়ক ইব্রাহিম কার্দি। তার জীবনের ট্র্যাজেডি নাটকটিকে ট্র্যাজিক করে তোলে।
প্র : ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটক রচনার প্রেক্ষাপট লেখ।
উ : ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালনি পাকিস্তান সরকার ‘ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন’ (বিএনআর) নামে একটি পতিষ্ঠান স্থাপন করে। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল সাম্প্রদায়িক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে ইতিহাস থেকে মুসলিম উপাদান, মুসলিম মিথ, মুসলিম ব্যক্তিত্বদের জীবন ও কর্ম অবলম্বনে ‘সাহিত্য’ রচনা করা। এই এ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতেই মুনীর চৌধুরী ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ (১৯৬২) লেখেন। তবে এ নাটকে তিনি যুদ্ধবিরোধী বাণীও প্রচার করেছেন। উল্লেখ্য, মুনীর চৌধুরী ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকারের দেয়া ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব গ্রহণ করেন। অবশ্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে খেতাবটি বর্জন করেছিলেন।
প্র : ‘কবর’ নাটকের পরিচয় দাও।
উ : ‘কবর’ (১৯৫৩) মুনীর চৌধুরীর একাঙ্ক নাটক। বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ এনে মুনীর চৌধুরীকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকার আটক ও জেলে প্রেরণ করে। জেলে থাকা অবস্থায় অন্য রাজবন্দি বামপন্থী লেখক রণেশ দাশগুপ্ত মুনীর চৌধুরীকে একটি নাটক লিখতে বলেন, যা ওই জেলখানাত্ েরিাজবন্দিরা অভিনয় করবেন। রণেশ দাশগুপ্ত মুনীর চৌধুরীকে গোপনে চিঠি দেন এই লিখে : ‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে অভিনয় করা যায় এ ধরনের নাটক লিখবে। মনে রাখবে রাত ১০ টার পরে জেলের বাতি নিভিয়ে দেবে। লণ্ঠনের আলোতে যেন নাটকটি কর াচলে আর মেয়ে চরিত্র এমনভাবে থাকে, যেন পুরুষদের দ্বারা তা অভিনয় করা চলে।’ সেই অনুরোধ রক্ষা করে মুনীর চৌধুরী ‘কবর’ নাটক লেখেন এবং ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কারান্তরালে রাজবন্দিরা তাতে অভিনয় করেন। উল্লেখ্য, এ নাটকে মুনীর চৌধুরী কোন নারী চরিত্রই রাখেন নি।
প্র : ‘কবর’ কোন নাটকের অবলম্বনে রচিত? এর কাহিনি লেখ।
উ : মার্কিন নাট্যকার irwin shaw রচিত Bury The Dead (১৯৩৬) নাটকের অনুসরণে এদেশীয় ঘটনা কেন্দ্র করে ‘কবর’ নাটক লেখা হয়েছে। সমাধি থেকে মানুষের আত্মার পুনরুত্থান ঘটে Bury The Dead নাটকে। ‘কবর’ নাটকে মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে শহরে কারফিউ দিয়ে লাশ গুম করতে গভীর রাতে কবরস্থানে নিয়ে যায়। পুলিশ ইন্স্পেক্টর হাফিজ এবং নেতা (নাটকে তার নাম নেই) যৌথভাবে এ দায়িত্ব নেয়। কিন্তু লাশগুলো ছিন্নভিন্ন দেখে তারা ধর্মীয় প্রথা অনুসারে কবরস্থ না করে একত্র মাটিচাপা দেবার সিদ্ধান্ত হয়। এতে বাধা দেয় গোর-খোদক। কবরস্থানে আশ্রয় নেয়া অরেক স্বজনহারা পাগল মুর্দা ফকিরও প্রতিবাদ জানায়। বলে : এ লাশগুলো আন্দোলনকারীর। এরা এভাবে কবরে যাবে না। লাশগুলোও তখন উঠে দাঁড়ায় এবং বলে : আমরা কবরে যাবো না। এসব দেখে মদ্যপ ইন্স্পেক্টর ও নেতা ভয় পেয়ে যায়। ‘কবর’ একুশে পটভূমিতে রচিত প্রথম বাংলা নাটক।
প্র : ‘মানুষ’ সম্পর্কে লেখ।
উ : ‘মানুষ’ (১৯৪৭) এক দৃশ্য বিশিষ্ট মুনীর চৌধুরীর নাটক। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে নাটকটি রচিত। এক হিন্দু তরুণ ডাক্তার আত্মরক্ষার জন্য এক মুসলিম বাড়িতে প্রবেশ করে। সে বাড়িতে একজন অসুস্থ, অন্য একজন দাঙ্গায় মার াগেছে। ডাক্তার রোগীকে চিকিৎসা দেয়। এ সময় হিন্দু ডাক্তারের কোঁজে মুসলিম দাঙ্গাকারীরা ঘরে প্রবেশ করে। তখন গৃহকর্ত্রী মশারির নিচে অসুস্থ সন্তানের পাশে ডাক্তারকে আড়াল করে তার জীবন রক্ষা করে। এভাবেই মানুষ বা মানবতা বড় হয়ে দেখা দেয়। মানুষ নাটকের চরিত্রাবলি : ফরিদ, জুলেখা, বাবা, মা, ডাক্তার।
প্র : ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নাটক সম্পর্কে লেখ।
উ : মুনীর চৌধুরী উইলিয়াম শেক্সপিয়রের The Taming of The Shrew (দি টেমিং অব দি শ্রু) অনুবাদ করেন ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নামে (১৯৭০)। এটি সর্বাংশে কমেডি। পাঁচ অঙ্ক বিশিষ্ট। পদুয়া নামক স্থানের এক ধনী ব্যাপ্তিস্তার দুই কন্যা ক্যাথেরিনা ও বিয়াঙ্কা। ক্যাথেরিনা খুবই মুখরা নারী, বিয়াঙ্ক সুন্দরী। ভেরোনা নামক স্থানের যুবক পেট্টুশিও ক্যাথেরিনার দর্প চূর্ণ করে তার পাণিগ্রহণ করে। মুনীর চৌধুরী নিজেই বলেছেন : কাহিনিটি স্থুল। কিন্তু এতে যে হাস্যরস আছে তা সতেজ, সরস ও উপভোগ্য।
প্র : তাঁর রচনাগুলোর জন্য তিনি কী কী পুরস্কার লাভ করেন?
উ : রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২), মীর মানস গ্রন্থের জন্য দাউদ পুরস্কার (১৯৬৫), সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (খেতাব, ১৯৬৬)।
প্র : তাঁর মৃত্যু সাল কত?
উ : নিখোঁজ ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১।

Related Articles

Latest Articles