প্র : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম তারিখ কত?
উ : ১৯শে মে, ১৯০৮।
প্র : তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : দুমকা, সাঁওতাল পরগনা, বিহার।
প্র : তাঁর পিতৃদত্ত নাম কী?
উ : প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাক নাম মানিক।
প্র : তিনি মূলত কী ছিলেন?
উ : কথাসাহিত্যিক।
প্র : তাঁর রচিত প্রথম গল্পে নাম কী এবং তা কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উ : অতসী মামী; বিচিত্রা পত্রিকা (পৌষ সংখ্যা ১৩৩৫)
প্র : যৌনাকাক্সক্ষার সঙ্গে উদর পূর্তির সমস্যা ভিত্তিক তাঁর রচনার নাম কী?
উ : পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬)।
প্র : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসগুলোর নাম কী?
উ : জননী (১৯৩৫), দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), পতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), সহরতলী (১৯৪০), অহিংসা (১৯৪১), সহরবাসের ইতিকথা (১৯৪৬), সোনার চেয়ে দামী (১৯৫১), সাব্ধনিতার স্বাদ (১৯৫১), আরোগ্য (১৯৫৩) ইত্যাদি।
প্র : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস নাম কী?
উ : জননী (১৯৩৫)।
প্র : ‘জননী’ উপন্যাস সম্পর্কে লেখ।
উ : ‘জননী’ (১৯৩৫) নারীর জননী-জীবনের নানা স্তর এবং সন্তানের সঙ্গে জননীর সম্পর্কে সুক্ষ্ম মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ মূলক উপন্যাস। চরিত্র ও কাহিনির নির্মোহ বাস্তব রূপায়ণ এই উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য্
প্র : ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : ‘পদ্মানদীর মাঝি’ (১৯৩৬) উপন্যাস ১৯৩৪ সাল থেকে ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। পদ্মা তীরবর্তী ধীবর-জীবন এর মূলকাহিনি। সম্ভবত এটি প্রথম বাংলা উপন্যাস, সেখানে আদ্যন্ত কথোপকথনে পূর্ববঙ্গীয় উপভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। প্রকৃতি ও মানুষের হাতে নির্যাতিত একটি গোষ্ঠীজীবনের ছোটো ছোটো সুখদুঃখ ভালোবাসা রিরংসা অসহায়তা ও আত্মরক্ষার তীব্র জৈবিক ইচ্ছার কাহিনি, গরিব মানুষের বেঁচে থাকার আগ্রহ ও সংগ্রামের সাহস, সেই সঙ্গে হোসেন মিঞা নামক এক রহস্যময় ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি উপন্যাসটিকে বাংলা সাহিত্যে অমরত্ব দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য চরিত্র : কুবের, কপিলা, মালা, ধনঞ্জয়, গণেশ, শীতলবাবু, হোসেন মিঞা। কুবের-কপিলার আন্তঃসম্পর্কেও উপন্যাসটির ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছে।
প্র : ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন : ‘সাহিত্যিকেরও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন।’ ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য় সেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ আছে। উপন্যাস আরম্ভ হয়েছে বজ্রাঘাতে নিহত হারু ঘোষের বর্ণনা দিয়ে। নায়ক শশী ডাক্তার বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও মড়াস্পর্শ অনুচিতসহ এরকম নানা কুসংস্কার তার মধ্যে কার্যকর। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের অন্তর্গত টানাপোড়েন ও অস্তিত্ব সংকট শশী চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত। কুসুম বৃষ্টিতে ভিজে তার কাছে এলেও শশী নিন্ডুপ থাকে। লোকায়ত ভাষায় অনুভব প্রকাশ করে কুসুম। উচ্ছ্বল এই নারী এক সময় অন্তর্গতভাবে সবকিছুতে আগ্রহ হারায়। তাই কুসুমের আত্মিক মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে সেনদিদির সঙ্গে শশীর পিতা গোপালের সম্পর্ক, যাদব পন্ডিত ও তার স্ত্রীর ইচ্ছামৃত্যু ইত্যাদি উপন্যাসটিকে বহুবিচিত্র করেছে। ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য় পুতুল বলতে এই মানুষগুলোকেই বোঝানো হয়েছে, যারা চারিত্রিক দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারে না; পুতুলের মতো অন্যের অল্প ধাক্কাতেই চালিত হয়।
প্র : ‘অমৃতস্য পুত্রা’ উপন্রাসের পরিচয় দাও।
উ : ১৯৩৮ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারিবারিক ও দাম্পত্য সমস্যামূলক এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। বিত্তবান বীরেশ্বরের দ্বিতীয়বার পাণিগহ্রণ, প্রতম বধ:ূর স্বামীগৃহ ত্যাগ, তাদের সন্তান শ্যামলালের বিবাহ, অতঃপর শ্যামলালের পুত্র অনুপমের সঙ্গে বীরেশ্বরের সাক্ষাৎ এবং তার টাকাতে অনুপমের বিলেতে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। যার তাৎপর্য হরো আদর্শবান পিতার সন্তানের আদর্শচ্যুতি। উল্লেখ্য যে অনুপম চরিত্রটি দিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ:্যায় আধুনিক জীবনবোধের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
প্র : ‘সহরতলী’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : ‘সহরতলী’ (১৯৪১) নিু মধ্যবিত্ত ও শ্রমিকশ্রেণির মানুষের জীবনের কাহিনি ও সেইসঙ্গে প্রবৃত্তির নিরাবরণ প্রকাশের উপন্যাস, মানুষের আচরণের বলিষ্ঠতা ও কপটতা, ঈর্ষা ও ইন্দ্রিয়াতুলার রূপায়ণ একানে আছে। যশোদা চরিত্রটির বলিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্ভ্রম বাংলাসাহিত্যে একটি ব্যতিক্রমী নারীচরিত্র হিসাবে স্বীকৃত।
প্র : ‘আরোগ্য’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজ সচেতনমূলক উপন্যাস ‘আরোগ্য’ (১৯৬২)। এই উপন্যাসে তিনি মানুষের জীবন ও মন বিশ্লেষণ করেছেন। মার্কসীয় জ্ঞানে রফলে তিনি উপলব্ধি করেছেন সামাজিক কারণেই মানুষ মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
প্র : ‘অহিংসা’ উপন্যাস সম্পর্কে লেখ।
উ : মানুষ যে অজ্ঞাতসারেই অনেক অহিংস কাজ করে অথবা হিংসার সঙ্গে অহিংসা যে মানুষের মধ্যে জড়িত থাকতে পারে এই বিষয় নিয়ে রচিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অহিংসা’ (১৯৪১)। উপন্যাসটিতে প্রকাশ হয়েছে আশ্রমিক ব্যবসার কাহিনি। যেখানে উল্লেখযোগ্য চরিত্র হয়ে কাহিনিকে গতিময় করেছে বিপিন সদানন্দ, মহেশ চৌধুরী ও মাধবী ইত্যাদি চরিত্র।
প্র : তাঁর রচিত গল্পগ্রন্থগুলো নাম কী?
উ : অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫), প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭), মিহি ও মোটা কাহিনি (১৯৩৮), সরীসৃপ (১৯৩৯), বৌ (১৯৪৩), সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩) ইত্যাদি।
প্র : তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের নাম কী?
উ : অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫)।
প্র : ‘আত্মহত্যার অধিকার’ গল্পের পরিচয় দাও।
উ : একটি দরিদ্র পরিবারের লাঞ্চিত জীবন কাহিনি নিয়ে রচিত ‘আত্মহত্যার অধিকার’ গল্পটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প’ গল্পগ্রন্থের অন্যতম বিখ্যাত গল্প। এখানে গরিব নীলমণির যে কষ্টের কাহিনি বিবৃত হয়েছে এবং সেই সঙ্গে তার যুবতী মেয়ে শ্যামা কষ্টকে দলিত করে, যেভাবে তার জীবনের রস আস্বাদনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, গল্পে সেই আসক্তিকেই বড় করে দেখানো হয়েছে। লেখকের ভাব পরিকল্পনায় প্রতিভাত হয়েছে যে, এই অসমবিন্যস্ত জগৎ ও জীবনে সবাই অসুস্থ ও বিকাশগ্রস্ত। স্রষ্টার সৃষ্টির অসমতার প্রতি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্ধানী দৃষ্টি এখানে বক্রও ব্যঙ্গাত্মক শিল্পরীতিতে বিশ্লেষিত হয়েছে। স্রষ্টা নিজে কেন সমাজে এমন অসাম্য সৃজন করলেন, সেই প্রশ্নও করেছেন তিনি।
প্র : ভিখু ও পাচি তাঁর কোন গল্পের পাত্র-পাত্রী?
উ : প্রাগৈতিহাসিক।
প্র : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কোন পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন?
উ : বঙ্গশ্রী (১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত)।
প্র : তিনি কত সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন?
উ : ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে।
প্র : তিনি প্রগতি লেখক সংঘের কী ছিলেন?
উ : নির্বাচিত যুগ্ম-সম্পাদক (১৯৪৬)।
প্র : মানিক সাহিত্য সম্পর্কে কী বলা হয়?
উ : শরৎচন্দ্র ও কল্লোল গোষ্ঠীর লেখকদের পর বাংলা সাহিত্যে বস্তুতান্ত্রিকতা ও মনোবিশ্লেষণ মানিক সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি পড্রতিফলিত।
প্র : পদ্মানদীর মাঝি নিয়ে কে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন?
উ : গৌতম ঘোষ।
প্র : শশী ও কুসুম কোন উপন্যাসের পাত্র-পাত্রী?
উ : পুতুলনাচের ইতিকথা।
প্র : তিনি কত তারিখে মারা যান?
উ : ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৫৬; কলকাতা।