প্র : শামসুর রাহমান কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : ১৯২৯ সালের ২৪শে অক্টোবর মাতুলালয় ঢাকার (পুরানো ঢকার) মাহুতটুলিতে। (সূত্র : বাংলা একাডেমী লেখক অভিধান : ১৯৯৮) পারিবারিক হিসেবে তাঁর জন্ম ২৩শে অক্টোবর।
প্র : তাঁর পৈতৃক নিবাস কোথায়?
উ : বর্তমান নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলি গ্রাম।
প্র : তাঁর মা-বাবার নাম কী?
উ : মা : আমেনা বেগম, বাবা : মুখলেসুর রহমান চৌধুরী।
প্র : তাঁর স্ত্রীর নাম কী?
উ : জোহরা রাহমান (বেগম)।
প্র : শামসুর রাহমানের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া কতটুকু?
উ : ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার কপোগেজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে। তিন বছর পড়েও অনার্স পরীক্ষা দেন নি। পরে বিএ (পাস) ডিগ্রি অর্জন করেন। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ ভর্তি হন। কিন্তু এমএ-র প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় পাস করলেও ফাইনাল পরীক্ষা দেন নি।
প্র : শামসুর রাহমানের ডাক নাম কী?
উ : বাচ্চু।
প্র : মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি একটি ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। সেটি কী?
উ : মজলুম আদিব।
প্র : তিনি মূলত কী হিসেবে পরিচিত?
উ : আধুনিক কবি; যিনি রোম্যান্টিকতার সঙ্গে সমাজমনস্কতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন কাব্যধারার জন্ম দিয়েছেন।
প্র : শামসুর রাহমানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির নাম লেখ।
উ : কবিতা : মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁর ৬৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য : প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে (১৯৬০), রৌদ্র করোটিতে (১৯৬৩), বিধ্বস্ত নীলিমা (১৯৬৭), বন্দী শিবির থেকে (১৯৭২), এক ধরনের অহংকার (১৯৭৫), শূন্যতায় তুমি শোকসভা (১৯৭৭), বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে (১৯৭৭), উদ্ভট উঠের পিঠে চলছে স্বদেশ (১৯৮২), যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে (১৯৮৪), অবিরল জলাভূমি (১৯৮৬), এক ফোঁটা কেমন অনল (১৯৮৬), বুক তাঁর বাংলাদেশের হৃদয় (১৯৮৮) হরিণের হাড় (১৯৯৩), উজাড় বাগানে (১৯৯৫), হেমন্ত সন্ধ্যায় কিছুকাল (১৯৯৭), সৌন্দর্য আমার ঘরে (১৯৯৮), স্বপ্নে ও দুঃস্বপ্নে বেঁচে আছি (১৯৯৯), শুনি হৃদয়ের ধ্বনি (২০০০), হৃদপদ্মে জ্যোৎøা দোলে (২০০১), ভষ্ম¯তূপে গোলাপের হাসি (২০০২), ভাঙাচোরা চাঁদ মুখ কালো করে ধুঁকছে (২০০৩), কৃষ্ণপক্ষে পূর্ণিমার দিকে (২০০৪), গোরস্থানে কোকিলের করুণ আহবান (২০০৫), অন্দকার থেকে আলোয় (২০০৬), না বাস্তব না দুঃস্বপ্ন (২০০৬)। উপন্যাস : মোট ৪টি উপন্যাস লিখেছেন : াক্টোপাস (১৯৮৩), অদ্ভুত আঁধার এক (১৯৮৫), নিয়ত মন্তাজ (১৯৮৫), এলো সে অবেলায় (১৯৯৪)। প্রবন্ধ : আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ (১৯৮৬), কবিতা এক ধরনের আশ্রয় (২০০২)। আত্মস্মৃতি : স্মৃতির শহর (১৯৭৯), কালের ধুলোয় লেখা (২০০৪)।
এগুলো ছাড়াও তিনি ৯টি শিশু-কিশোর সাহিত্যগ্রন্থ, ৩টি অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ, ৩টি অনুবাদ নাটকগ্রন্থসহ কলামগ্রন্থ, নিবন্দগ্রন্থ ইত্যাদি মিলে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন।
প্র : ‘বন্দী শিবির থেকে’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : শামসুর রাহমানের খ্যাতি ও পরিচিতি এর আগে থেকে কিছুটা থাকলেও প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে তাঁর ‘বন্দী শিবির থেকে’। এর অধিকাংশ কবিতা মুক্তিযুদ্ধকালে অবরুদ্ধ বাংরাদেশে এপ্রিল-ডিসেম্বর, ১৯৭১ সময়ে রচিত। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কলকাতা থেকে গ্রন্থটি প্রঞম প্রকাশিত হয়। কাব্যগ্রন্থটির শুরুতে ‘পূর্বলেখ’ শিরোনামে একটি ভূমিকা সংযোজন করে কবি তাঁর কাব্যরচনার প্রেক্ষঅপট বর্ণনা করেছেন। ৩৮টি কবিতা এগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখযোগ্য কবিাত : তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা তুমি, মধুস্মৃতি, রক্তাক্ত প্রান্তরে ইত্যাদি। প্রতিটি কবিতায় স্বাধীনতা যুদ্ধকালনি আবেগ ও প্রত্যাশা র্যক্ত। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ১৯৭১ সালের শহিদদের উদ্দেশ্যে।
প্র : ‘আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : শামসুর রাহমানের নবম কাব্যগ্রন্থ এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। কাব্যগ্রন্থটিতে মোট ৪৬টি কবিতা সংকরিত হয়েছে। কবিতাগুলোতে আছে স্বপ্নরোক, প্রতিবেশ ও সমকারের অন্তর্গত নানা অনুষঙ্গ, নিঃসঙ্গতা, ব্যর্থতা, যুদ্ধোত্তর হতাশা ইত্যাদি বিষয়্ গ্রন্থটিতে টানা গদ্যে লেখা কবিতা যেমন আছে তেমনি আছে অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত ছন্দের ব্যবহার।
প্র : ‘এক ধরনের অহংকার’ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে লেখ?
উ : শামসুর রাহমান রচিত ৫২টি কবিতার সংকলন এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে। কাব্যগ্রন্থটিতে প্রেম-কাম, নিসর্গ-প্রকৃতি, আশা-নিরাশার দ্বৈরথে বিদীর্ণ। কবির আত্মবিশ্লেষণ, একই সঙ্গে শৈশব ও বাল্য, যৌবন ও বাৎসল্য প্রভৃতি বিষয় এখানে চিত্রিত হয়েছে।
প্র : ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : ২৩টি কবিতার সমাহারে শামসুর রাহমানের এই কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সাল্ েকবিতাগুলোতে আছে কবির স্বদেশ চেতনার পরিচয়, দুঃসময়ে দীর্ণ হৃদয়ের হাহাকার ও অস্থিরতা এবং পাশ্চাত্য পুরাণের পাশাপাশি তাঁর স্বদেশি পুরাণের মাধ্যমে ব্যক্তিমহিলা সন্ধানের প্রয়াস। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত দেশে সংঘটিত একাধিক সামরিক অভ্যুত্থান এবং সামরিক শাসনের যূপকাষ্ঠে দেশ ও জনগণের চরম অবস্থার প্রতিফলন আছে এ কাব্যগ্রন্থে।
প্র : তাঁর দুটি বিখ্যাত কবিতার নাম লেখ।
উ : স্বাধীনতা তুমি, তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা।
প্র : শামসুর রাহমানের কর্মজীবন সম্পর্কে লেখ।
উ : রেডিও পাকিস্তানে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে কর্মজীবন আরম্ভ। পরে দৈনিক মর্নিং নিউজে সহ-সম্পাদক (১৯৫৭), দৈনিক পাকিস্তানের সহকারি সম্পাদক (১৯৬৫), দৈনিক বাংলার সম্পাদক (১৯৭৭)। স্বৈরাচার এরশাদ-বিরোধী গণআন্দোলনে একাত্ম হয়ে প্রতিবাদ স্বরূপ ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সরকার পরিচারিত দৈনিক বাংলা থেকে পদত্যাগ।
প্র : তিনি কী কী পুরস্কার লাভ করেন?
উ : আদমজি পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯১)।
প্র : তিনি কবে, কোথাং মৃত্যুবরণ করেন?
উ : ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই অগস্ট সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
প্র : তাঁকে কবে, কোথায় সমাহিত করাহয়?
উ : কবির ব্যক্ত উচ্ছানুসারে বনানী সমাধিক্ষেত্রে মা আমেনা বেগমের সমাধির মধ্যে ১৮ই অগস্ট, ২০০৬ কবিকে সমাহিত করা হয়।