Wednesday, September 11, 2024

শাহ আবদুল করিম

প্র : শাহ আবদুল করিম কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : তৎকালীন সিলেট জেলা, বর্তমান : সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণে দিরাই থানায় ১৯১৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি (১৩২২ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার)।
প্র : তাঁর মাতা-পিতার নাম কী?
উ : নাইওর জান বিবি এবং ইব্রাহিম আলি।
প্র : তাঁর কয় ভাই-বোন ছিল ?
উ : তাঁর অন্য কোনো ভাই ছিল না; পাঁচজন বোন ছিল।
প্র : তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলির নাম লেখ।
উ : প্রথম লেখা গ্রন্থ আফতাব সংগীত, প্রকাশ : ১৯৫৬ সাল। এরপর বের হয় গণসংগীত, কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি, কালনীর কূল ইত্যাদি।
প্র : আবদুল করিমের লেখা ও সুর করা কয়েকটি গানের উল্লেখ কর।
উ : ১. আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম,
২. কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া,
৩. আমি কুলহারা কলঙ্কিনী,
৪. গাড়ি চলে না, চলে না, চলে নারে,
৫. বন্ধে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে,
৬. গান গাই আমার মনরে বুঝাই, মন থাকে পাগলপারা,
৭. আসি বলে গেল বন্ধু আইল না,
৮. আমি তোমার কলের গাড়ি তুমি আমার ড্রাইভার,
৯. মন কান্দে প্রাণ কান্দে রে, কান্দে আমার হিয়া,
১০. বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে।
প্র : আবদুল করিমের জীবনদর্শন কী?
উ : বাউল ভিন্ন একটি ধর্ম। তিনি প্রচলিত বাউল ধর্মের বাইরে নতুন এক বিশ্বাস সৃষ্টি করেছেন। আবদুল করিমের দর্শন হলো, মানবপ্রেমই বড় ধর্ম। সৃষ্টিকর্তাকে পেতে হলে আগে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের মাঝেই সৃষ্টিবর্তার অবস্থান। এটাই ছিল তাঁর জীবনদর্শন।
প্র : তিনি কোন কোন ব্যক্তির প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন?
উ : প্রথম জীবনে লালন শাহ্ ও হাসন রাজার দর্শনে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। তবে প্রথম দিকে লালন শাহ্ ও হাসন রাজার মতো বাউল আঙ্গিকের গান গেয়ে গ্রাম- বাংলার লোক গানকেই ভিন্ন ধারায় তিনি এগিয়ে নিয়ে যান। বাংরার লোকগানের অন্তর্গত চেতনাই হলো সমস্বয়বাদ। আবদুল করিম এই সমন্বয়বাদকে নিজের বিশ্বাস ও বোধের দ্বারা আরো সৃদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করেন এবং বাংরার লোকগানে নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। যে কারণে তাঁর গান লালন ও হাসন রাজার গানের চেয়ে পৃথকতা লাভ করে। লারন ও হাসনের গানে আধ্যাত্মিকতা যেখানে প্রধান আবদুল করিমের গানে প্রাধ্যন্য ইহজাগতিকতা।
প্র : কী কারণে এবং কবে তিনি প্রথম বিদেশে যান?
উ : ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যে যান গান গাইবার জন্য। এাই তাঁর জীবনের প্রথম বিদেশ সফল।
প্র : মৃত্যুর আগে তিনি কোন গান শুনতে চেয়েছিলেন?
উ : চিকিৎসা চলাকালে হাসপাতালে আবদুল করিমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকা একমাত্র ছেলে শাহ নূর জালাল বলেন, ‘বাবা শ্বাসকষ্টে ভূগছিলেন। টানা চার দিন চিকিৎসার পর খানিক সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। বুধবার [৯-৯-২০০৯] তিনি খাওয়া-দাওয়াও করেন। আস্তে আস্তে কথাবার্তা বলছিলেন। একপর্যায়ে গান মুনতে চাইলে বাবার শিষ্য বাউল বরিশউদ্দিন নিজের লেখা একটি গান গেয়ে শোনান। এ গান শুনে তিনি হাসেন। পরে তিনি তাঁর প্রিয় গান ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে কেমন দেখা যায়… শুনতে চাইলে বশির এ গান যখন গান, তখন তাঁর চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। শিষ্য বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এই হাসি-কান্নার পর তিনি নির্লিপ্ত হয়ে পড়েন। আর কোনো সাড়া শব্দ শোনা যায় নি। কোনো কথাও বলেন নি।’
প্র : তিনি কী কী পুরস্কার পেয়েছেন?
উ : প্রায় দেড়শতাধিক পদক-পুরস্কার সহ ২০০১ সালে একুশে পদক।
প্র : তিনি কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উ : ২০০৯ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর শনিবার, সকাল ৭.৪৫ মিনিটে; সিলেটে।

Related Articles

Latest Articles