Friday, October 4, 2024

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী

প্র : ইসমাইল হোসেন কবে এবং কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুলাই, সিরাজগঞ্জ (মতান্তরে ৫ই আগস্ট, ১৮৭৯)।
প্র : তাঁর পিতার নাম ও পেশা কী?
উ : আব্দুল করিম খন্দকার (১৮৫৬-১৯২৪); পেশায় ভেষজ চিকিৎসক।
প্র : তাঁর মাতার নাম কী?
উ : নূরজাহান খানম।
প্র : সিরাজী কি তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নামের অংশ?
উ : না। সিরাজগঞ্জে জন্মে ছিলেন বলে নামের শেষে ‘সিরাজী’ যুক্ত করেন। তিনি ‘শিরাজী’ বানানও লিখতেন। প্রথম দিককার বইতে তাঁর নামের সঙ্গে ‘শিরাজী’ যুক্ত থাকত।
প্র : তাঁর রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে লেখ।
উ : পথম জীবনে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা লালন করতেন। কংগ্রেসের বিশেষ করে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ ও বাগ্মী নেতা ছিলেন। বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫-১৯১১) বিরোধী আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯১২-১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি মুসলিম ধর্মীয় চেতনায় অধিক পরিমাণে প্রভাবিত হতে থাকেন এবং পরে সম্পূর্ণভাবে মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
প্র : তাঁর সাহিত্যচর্চার পরিচয় দাও।
উ : ইসমাইল হোসেন সিরাজীর গদ্য বঙ্কিমচন্দ্রের মতো সংস্কৃতবহুল, কবিতা মধুসূদনের মতো ক্লাসিক রীতির।
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : অনল প্রবাহ (১৯০০), উচ্ছ্বাস (১৯০৭), উদ্বোধন (১৯০৭), স্পেনবিজয় কাব্য (১৯১৪); উপন্যাস: তারা-বাঈ (১৯০৮), রায়নন্দিনী (১৯১৮), ফিরোজা বেগম (১৯২৩); প্রবন্ধ : স্বজাতি প্রেম (১৯০৯), তুর্কিনারী জীবন (১৯১৩), স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা (১৯১৬); ভ্রমণকাহিনি : তুরস্ক ভ্রমণ (১৯২০)।
প্র : ‘অনল প্রবাহ’ কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ : সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত মুসলিম জাগরণমূলক কাব্য ‘অনল প্রবাহ’ প্রকাশিত হয় ১৯০০ সালে। ‘যা চলে গেছে তার জন্য শোক বৃথা বরং জাতির হৃতগৌরব উদ্ধারের প্রচেষ্টাই মুখ্য’ এই বাণীতে মুসলমানদের দুরবস্থা ও অধঃপতন ব্যক্ত করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও রোষ প্রকাশ করা হয়েছে এই কাব্যটিতে। ‘অনল প্রবাহে’ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভারত ভিক্ষা’, ‘ভারত বিলাপ’ ইত্যাদি কবিতার সুষ্পষ্ট প্রভাব আছে। ১৩১৫ বঙ্গাব্দে (১৯০৮) পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়। প্রথম সংস্করণে কবিতা ছিল মাত্র নয়টি। এগুলো হচ্ছে- অনল-প্রবাহ, তুর্যধ্বনি, মূর্চ্ছনা, বীর-পূজা, অভিভাষণ : ছাত্রগণের প্রতি, মরক্কো-সঙ্কটে, আমীর-আগামনে, দীপনা, আমীর-অভ্যর্থনা। ১৯০৯ সারের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালনি বাংলা সরকার গ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত করেন এবং ১১৭, ১২৪ (ক), ১৫৩ ধারা অনুসারে গ্রন্থাকারের প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে পলাতক সিরাজীকে ধরিয়ে দেবার জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার ঘোষিত হয়্ ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্বেষ ও প্রচারণার অভিযোগে দুবছর কারাদ- ভোগ করে ১৯১২ সালের ১৪ই মে তিনি কারামুক্ত হন। তাঁর রচিত ‘কারা-কাহিনী’ মূলত এ জেল-জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে রচিত।
প্র : ‘স্পেনবিজয় কাব্য’ সম্পর্কে লেখ।
উ : ইসমাইল হোসেন সিরাজী মহাকাব্য লিখতে চেয়েছিরেন। ‘স্পেনবিজয় কাব্যে’ (১৯১৪) মুসলিম বীর তারেক ও স্পেনের সম্রাট রডারিকের সংগ্রামের কাহিনি বর্ণনার মাধ্যমে মুসলিমদের অতীত বীরত্বপূর্ণ অধ্যায় নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে। বৈশিষ্ট্যের বিচারে এটি পরিপূর্ণ মহাকাব্য হয় নি।
প্র : ‘রায়নন্দিনী’ উপন্যাস সম্পর্কে লেখ।
উ : বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’র প্রতিক্রিয়ায় সিরাজী ‘রায়নন্দিনী’ লেখেন। ‘দুর্গেশনন্দিনী’তে একটি প্রসঙ্গ আছে, হিন্দু সুদর্শন যুবক জগৎ সিংকে দেখে মুসলিম নারী আয়েষা মুগ্ধ হয়। এইটুকুর প্রতিক্রিয়ায় সিরাজী পুরো উপন্যাস লিখে ফেরেন। ‘রায়নন্দিনী’তে ঈশা খাঁকে দেখে কেদার রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ীকে দিয়ে শুধু মুগ্ধতা নয়, ইসলামধর্ম গ্রহণ করিয়ে বরমালা প্রদান করানো হয়্ উপন্যাস হিসেবে ‘রায়নন্দিনী’ ব্যর্থ। তবে প্রতিক্রিয়ার ইতিহাসে এই নামটি স্মরণ করতে হয়। উপন্যাসটির শেষ বাক্য : ‘বহুতর উচ্চশ্রেণীর ব্রাহ্মণ-পরিবার ক্রমশঃ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।’
প্র : তিনি কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উ : ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জুলাই।

Related Articles

Latest Articles